শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর

তাঁর পরিচয়-

শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর মানবতার পথিকৃৎ, আধ্যাত্মিক গুরু এবং শান্তির দূত৷ উদ্বেগহীন, হিংসামুক্ত এক সমাজের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, দি আর্ট অব লিভিং-এর বিভিন্ন সেবা প্রকল্প ও নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে তাতে সামিল হয়েছে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ৷

সূচনা-

শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ১৯৫৬ সালে দক্ষিণ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন৷ শিশুকাল থেকেই তিনি প্রতিভাদীপ্ত৷চার বছর বয়সে,এক প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ, ভগবদ্গীতা থেকে তিনি আবৃত্তি করতে পারতেন৷ প্রায়শঃ তাকে ধ্যানমগ্ন দেখা যেত৷ মহাত্মা গান্ধীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী শ্রী সুধাকর চতুর্বেদী ছিলেন তাঁর প্রথম শিক্ষক৷ তিনি যুগপৎ পদার্থবিদ্যা এবং বৈদিক সাহিত্যে প্রথাগত শিক্ষা অর্জন করেছেন৷

আর্ট অব লিভিং এবং আই এ এইচ ভি-এর প্রতিষ্ঠাঃ-

ভারতের কর্নাটক প্রদেশে অবস্থিত শিমোগায় শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর দশদিনব্যাপী এক মৌন-ব্রত সাধনায় সমাহিত হন৷ শ্বাসক্রিয়ার এক শক্তি-সঞ্চারিত শৈলী ‘সুদর্শন ক্রিয়া’ তাঁর উপলব্ধিতে সঞ্জাত হয়৷ সময়ের সাথে সাথে সুদর্শন ক্রিয়া আর্ট অফ লিভিং-এর সব কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় বস্তু হিসাবে পরিগণিত হয়ে ওঠে৷

শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর দি আর্ট অফ লিভিংকে আন্তর্জাতিক, লাভালাভমুক্ত, শিক্ষা ও জ্ঞান কেন্দ্রিক এক মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছেন। এখানে শিক্ষামূলক আত্মোন্নতির কার্যক্রমগুলি উদ্বেগ প্রশমনের কিছু অমোঘ কৌশল শেখায় আর সুচেতনার এক আশ্বাস সৃজন করে৷ কোন  বিশেষ জাতি বা সম্প্রদায় নয়, এই সব কার্যপ্রয়োগ সমগ্র বিশ্বের সমাজের সমস্ত শ্রেণীতে ফলপ্রসূ হয়ে উঠেছে৷

১৯৯৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মানবিক মূল্যবোধের আন্তর্জাতিক সংগঠন- ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান ভ্যালুজ (আই এ এইচ ভি) ৷ এটির উদ্দেশ্য হল দি আর্ট অফ লিভিং-এর সঙ্গে একীভূত হয়ে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের তত্ত্বাবধান, মানবিক মূল্যবোধের লালন এবং দ্বন্দ্ববিক্ষোভ ও সমস্যাদীর্ণ পরিস্থিতিকে সাম্যতায় ফিরিয়ে আনা৷ ভারতবর্ষে, আফ্রিকা ও দক্ষিণ  আমেরিকায়, এই দুটি সহজাত সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীরা গ্রামীণ স্তরে যথেষ্ট উন্নয়নমূলক কর্মসূচী রূপায়নে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং ৪০২১২টি গ্রামে তাদের কর্মধারা বিস্তার করেছে।

সেবার অনুপ্রেরণা আর জ্ঞানের প্রসারণ

অগ্রণী মানবপ্রেমী শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর-এর প্রকল্পগুলি বিভিন্নস্তরের মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে- প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, আতঙ্কবাদ ও যুদ্ধে আক্রান্ত মানুষ, দারিদ্র্যের প্রান্তিক সীমায় অবস্থিত শিশুরা এবং হানাহানিতে ছিন্নদীর্ণ সম্প্রদায়গুলি৷ তাঁর অমোঘ আহ্বান স্বেচ্ছাসেবীদের অনুপ্রাণিত করেছে সেবার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হতে; ফলস্বরূপ তারা সমগ্র পৃথিবীর সমস্যাসঙ্কুল অঞ্চলগুলিতে কার্য উপাচার নিয়ে পৌঁছে গেছে৷

আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর যোগ এবং ধ্যানের ঐতিহ্যকে পুনর্জাগ্রত করেছেন এবং একবিংশ শতাব্দীর পটভূমিকায় তাকে যুগোপযোগী করে স্থাপন করেছেন৷ আদি প্রজ্ঞাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ব্যক্তি ও সমষ্টির উন্নয়নের জন্য নূতনতর পন্থার সৃজন করেছেন৷এর মধ্যে আছে সুদর্শন ক্রিয়া যা অগনিত নরনারীকে উদ্বেগ প্রশমন করে দৈনন্দিন জীবনে এক আত্মশক্তি ও শান্তির ভান্ডার উন্মোচনে সাহায্য করেছে৷ মাত্র ৩১ বছরের মধ্যে তাঁর কাজের প্রকল্প এবং উদ্যোগ ১৫২টি দেশের ৩৭ কোটির অধিকসংখ্যক মানুষকে প্রভাবিত করেছে৷

শান্তির প্রতীক

শান্তির দূতরূপে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর অশান্তি দূরীকরণের জন্য এক মুখ্য ভূমিকা পালন করে এসেছেন এবং সারা বিশ্বের জনগণসভায় ও মঞ্চে অহিংসার বার্তা প্রচার করেছেন৷ শান্তিকে একমাত্র উপজীব্য করে নিরপেক্ষ পথিক হিসাবে আশার বাণী বহন করে তিনি যু্দ্ধবিদ্ধস্ত মানুষের কাছে পৌছে গিয়েছেন৷ ইরাক, আইভরিকোষ্ট, কাশ্মীর ও বিহারের বিবদমান পক্ষদের একসাথে আলোচনা বৈঠকে নিয়ে আসার বিশেষ কৃতিত্ব তাঁরই৷ কৃষ্ণদেব রায়-এর রাজ্যাভিষেকের ৫০০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে অভ্যর্থনা কমিটি (কর্ণাটক সরকার আয়োজিত) চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছে৷ জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নিযুক্ত অমরনাথ শ্রাইন বোর্ডের অন্যতম সদস্য হিসাবেও শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর মনোনীত হয়েছেন৷

বিভিন্ন কর্মসূচী ও বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর মানবিক মূল্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন৷ মানবতা আমাদের পরমতম সত্তা- একথা শ্রীশ্রীর উচ্চারণে বারবার স্বীকৃতি পেয়েছে৷ সর্বধর্মসমন্বয় এবং সর্বসংস্কৃতির মেলবন্ধনের সাহায্যেই ধর্মোন্মাদনা তথা মৌলবাদ-আক্রান্ত এই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী শান্তি স্থাপিত হতে পারে- একথা তিনি বহুবার ব্যক্ত করেছেন৷

জাতি ধর্ম এবং দেশের সীমা ছাড়িয়ে তাঁর বাণী ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ তাঁর কর্মের মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের জীবনে ধ্বনিত হয়েছে৷ মানবিক মূল্যবোধের পুনর্জাগরণের দ্বারা, নিঃস্বার্থ সেবার দ্বারা নির্ভার নিঃশঙ্ক সমাজ গড়ে তোলা যায় এবং বাহ্যিক সুখের সাথে অন্তরের শান্তিও লাভ করা যায়-একথা তাঁর মূল বক্তব্য৷