আমি কখন ঘুমাবো?

ধর্ম হলো প্রকৃতি। দেহের নিজস্ব ধর্ম আছে। দেহ যদি ঘুমাতে চায় তাহলে তোমাকে তাকে বিশ্রাম দিতে হবে। কিন্তু দেহ যখন ঘুমাতে চায়, আমরা কি করি? আকর্ষণীয় সিনেমা দেখার জন্য টিভি চালিয়ে দিই। আমরা দেহের বিরুদ্ধে চলে যাই। দেহের কিছু চাহিদা আছে, আমাদের দেহের কথা শোনা উচিত।

আমি কতটা ঘুমাবো?

শক্তির চারটে উৎস আছে:

  • খাদ্য: প্রাচীন ভারতে যদি কারো ব্যবহার বিচিত্র হতো তাহলে,- “তুমি এমন অদ্ভুত ব‍্যবহার করছো কেন?”জিজ্ঞাসা না করে লোকে জানতে চাইতো – “ওকে কি খেতে দেওয়া হয়েছে? “ বা “ তুমি কি খেয়েছো? “ একদিক দিয়ে এটা সত্যি। খাদ্য হলো শক্তির প্রথম উৎস।

  • ঘুম: যেকোনো সুস্থ মানুষকে যদি দুদিন ঘুমাতে না দেওয়া হয়, তাহলে সে স্বাভাবিক থাকবে না। তার আচরণে প্রচণ্ড পরিবর্তন দেখা দেবে। তাই ঘুমানো বা সঠিক বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • শ্বাস: শ্বাস হলো শক্তির তৃতীয় উৎস। কয়েক মিনিটের জন্য সঠিকভাবে শ্বাসগ্রহণ করলে এবং যোগাভ‍্যাস করলে দেহ ও মনে শক্তির সঞ্চার হয় এবং আত্মার উন্নতি হয়।

  • প্রসন্ন মন: সুখী ও তৃপ্ত মন অনেক শান্ত ও স্থির হয়। কয়েক মিনিটের ধ্যান মনকে স্বচ্ছন্দ ও প্রসন্ন রাখে।

তোমাদের ভালো পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন , অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টার একটানা ঘুম। যখন তোমাদের উৎসাহ প্রবল থাকে, জীবনে একটা উদ্দেশ্য থাকে তখন অন্য কিছুই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। তোমরা জানো যে ভেতর থেকেই শক্তি পাবে, তবুও সময় বার করো ঘুমের জন্য, বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিভাবে ঘুমের জন্য তৈরি হবো?

সাধারণত যখন আমরা ঘুমাতে যাই তখন আমরা সেই সব জিনিসের কথা চিন্তা করি যা আমরা পাইনি অথবা যাতে সফল হইনি। ঘুমানোর আগে আমরা যদি আমাদের ব‍্যর্থতার কথা, হতাশার কথা বা কারো সাথে মনোমালিন্যের কথা চিন্তা করি তাহলে আমাদের অবচেতন মনে তা থেকে যায়। আমরা তারই বীজ বপন করি। এবং তখন পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা ক্লান্ত, বিরক্ত, ও হতাশ বোধ করি।

কিন্তু আমরা যদি রাতে আমাদের সাফল্যের কথা ভাবি বা জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোতে মনোযোগ দিই, ভালো চিন্তা করি, অন‍্যের ভালো কামনা করি, জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা ভেবে ঘুমাতে যাই, বা প্রার্থনা করি? প্রার্থনা হলো সেই সব নিয়ে চিন্তা করা যে ব‍্যাপারে আমরা জীবনে কৃতজ্ঞ বোধ করেছি।

এই ধরনের ইতিবাচক চিন্তা যদি মনে রাখা যায়, মহাকাশে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং তারপর নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমানো যায়, তাহলে পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙে নিজেকে অনেক তরতাজা বোধ করা যায়।

সচেতন ভাবে এই অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করো। এভাবেই সফল জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে। ইতিবাচকতার বীজ মহাকাশে বপন করাই হলো এর গুপ্ত রহস্য। এবং তুমি কিভাবে তা করবে? সঠিকভাবে শ্বাস গ্রহণ ও ধ‍্যানের মাধ‍্যমে । তখন এই সবই ঘটতে থাকে!

শীঘ্র ঘুমানোর জন‍্য ১০টি সহজ পন্থা

  1. “শীঘ্র” শব্দটা বাদ দাও: সর্বপ্রথম বাধা হলো এই দুশ্চিন্তা যে আমি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চাই। এটা আমাদের জাগিয়ে রাখতে পারে! এই “শীঘ্র” শব্দটা ত‍্যাগ করলে তুমি অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়বে।

  2. দেরী করে আহার কোরো না: দ্বিতীয় বাধা হলো দেরীতে আহার গ্রহণ এবং উচ্চ বিপাকীয় হার। সঠিক পরিমাণে খাবার সাহায্য করবে- খুব ভারীও না, খুব হালকাও না।

  3. প্রাণায়াম করো: যা সাহায্য করবে তা হলো সঠিক শ্বাস গ্রহণ, কিছু প্রাণায়াম। এটা অবশ্যই সাহায্য করবে। এর সাথে গভীর শ্বাস নিলেও উপকার হবে। অল্পবিস্তর যোগাভ‍্যাস ও সাহায্য করবে।

  4. ধ‍্যান করো: ধ‍্যান অবশ্যই সাহায্য করে। আরও ধ‍্যান করো। বার বার ধ‍্যান করো।

  5. অতীত ও ভবিষ্যৎ কে মন থেকে দূর করে দাও: আর একটা বাধা হলো দুশ্চিন্তা। তুমি আগামীর জন্য আশঙ্কিত অথবা অতীতের ঘটনার জন্যে উদ্বিগ্ন । ঘুমের ব‍্যাঘাতের একটা মূল কারণ হলো এই দুশ্চিন্তা।

  6. যোগনিদ্রা: যদি ঘুম না আসে তবে যোগনিদ্রা করো। বিছানায় শোয়া অবস্থায় গুরুদেবের চ‍্যানেলে অথবা দ‍্য আর্ট অফ লিভিং অ‍্যাপে যোগনিদ্রা চালিয়ে দেহের বিভিন্ন অংশে তোমার মনোযোগকে নিয়ে যাও। এতে ঘুম এসে যাবে।

  7. হালকা সঙ্গীত শোনো: কথাবিহীন হালকা সঙ্গীত বা যন্ত্রসঙ্গীতও সাহায্য করবে। অনুভব করো যে সঙ্গীত তোমার দেহের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু শুয়ে থেকে এমন কোনো যন্ত্রসঙ্গীত শোনো যা তোমার পরিচিত নয়। যদি তোমার পরিচিত কোনো বাজনা বাজাও, তাহলে তুমি তার সাথে তাল দেবে বা গাইবে। কিন্তু অজানা হালকা সঙ্গীত তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে।

  8. দুধ পান করো: অল্প গরম বা ঠান্ডা দুধ শুতে যাওয়ার আগে পান করে অনেকেই উপকৃত হয়েছে।

  9. ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পাওয়ার অফ করো: ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগে মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ করো। মনে করো ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে থেকে ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টা পরে অবধি ফোনের উপর কার্ফু জারি করা হয়েছে।

  10. কঠোর পরিশ্রম করো: যে সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেছে সে মশার উপদ্রবেও ভালো ভাবে ঘুমাবে। মশার কামড়ের কথা ভুলে যাও, ইঁদুরের কামড়েও তার ঘুম ভাঙবে না। কিন্তু দিনের বেলা যদি সময় নষ্ট করো তবে রাতে নরম, আরামদায়ক বিছানায় শুলেও ঘুম আসবে না ।তুমি এপাশ ওপাশ করবে আর মশার গুন গুন তোমাকে জাগিয়ে রাখবে। তোমার বিনিদ্র রাত্রির জন্য মশা কিন্তু দায়ী নয় । তোমার আলস‍্য তোমার অনিদ্রার কারণ। তুমি যদি সকাল থেকে বিছানায় শুয়ে থাকো তবে রাত্রে ঘুমাবে কি করে? যারা বেশি ঘুমায়, তারা ঘুমকে উপভোগ করতে পারে না, কিন্তু যারা মাঠে ঘাটে সারাদিন পরিশ্রম করে তারা সহজেই ঘুমিয়ে তৃপ্তি পায়।

আরামে বিশ্রাম করা এবং ভালো ঘুমানোর জন্য যে শক্তিশালী পদ্ধতিগুলো আছে তাদের বিষয়ে জানার জন্য “ দ‍্য আর্ট অফ লিভিং ওয়ার্কশপ টু গেট রিড অফ অ‍্যাংজাইটি অ্যান্ড স্লিপ ডিসর্ডার “ এ যোগ দাও।

অতিরিক্ত: নিদ্রা ও প্রকাশ

ধরো, রাতে তোমার একটা ইচ্ছা হলো। জল বা চা বা ফলের রস পান করার ইচ্ছা জাগলো অথচ তুমি ইচ্ছে পূরণ না করে ঘুমাতে গেলে। কি হবে রাতে?  তুমি স্বপ্নে দেখবে যে তুমি পান করছো অথবা তুমি গভীর ভাবে ঘুমাতে পারবেনা।

ভালো ঘুমের জন্য তোমার কি করা উচিত?  মনের দিক থেকে সব কিছু ছেড়ে দাও। যখন ছেড়ে দেবে, তখন তোমার ইচ্ছা পূরণ হবে – এটাই গুপ্ত কথা।

যদি তোমার ইচ্ছাটাকে ধরে রাখো, তবে তা পূরণ হবেনা। তাই তোমাকে কি করতে হবে?  তোমার ইচ্ছা আছে। গুরুর কাছে বা পরম শক্তিমানের কাছে তা সমর্পণ করো এবং বিশ্রাম করো।  যখন তুমি ছেড়ে দেবে, তুমি বিশ্রাম করতে পারবে। তুমি তোমার আপন প্রকৃতিতে থাকতে পারবে।

    Wait!

    Don't leave without a smile

    Talk to our experts and learn more about Sudarshan Kriya

    Reverse lifestyle diseases | Reduce stress & anxiety | Raise the ‘prana’ (subtle life force) level to be happy | Boost immunity

     
    *
    *
    *
    *
    *