সুদর্শন ক্রিয়া™ একটি অনন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের কৌশল, যা মানসিক চাপ, ক্লান্তি এবং রাগ, হতাশা, বিষণ্নতার মতো নেতিবাচক আবেগ দূর করে মনকে শান্ত ও প্রাণবন্ত রাখে, মনোযোগী ও একইসাথে আরামদায়ক অবস্থায় রাখে। সুদর্শন ক্রিয়া™-তে বিশেষ প্রাকৃতিক শ্বাস-ছন্দ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা শরীর, মন এবং আবেগের মধ্যে সামঞ্জস্য আনে। নিয়মিত সুদর্শন ক্রিয়া™ চর্চা এবং জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের বহু মানুষ তাঁদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করেও চাপমুক্ত জীবনযাপন করছেন।
আর্ট অব লিভিং–এর প্রতিষ্ঠাতা গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর, ১৯৮১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিমোগার ভদ্রা নদীর তীরে দশ দিনের নীরবতা ও উপবাস শেষে সুদর্শন ক্রিয়াকে উপলব্ধি করেন। তিনি বলেন:
“শ্বাস শরীর ও মনের সংযোগ। প্রতিটি আবেগের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট শ্বাসের ছন্দ জড়িত। যেমন আবেগ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরনকে প্রভাবিত করে, তেমনি আমরা শ্বাসের ছন্দ পরিবর্তন করে মানসিক ও আচরণগত ধরণ পরিবর্তন করতে পারি। এটি রাগ, উদ্বেগ ও চিন্তা দূর করে মনকে পুরোপুরি আরামদায়ক ও প্রাণবন্ত করে তোলে।”
শ্বাসের ছন্দ
আমাদের শরীর ও মনের নিজস্ব ছন্দ রয়েছে। যেমন ক্ষুধা বা ঘুমের প্রয়োজন আলাদা সময়ে আসে।
শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর বলেন: “প্রকৃতির একটি ছন্দ আছে। তেমনি শরীর এবং মনের আবেগেরও ছন্দ আছে। যদি তুমি চিন্তাগুলো লক্ষ্য কর, দেখবে সন্দেহ, উৎকণ্ঠারও একটি ছন্দ রয়েছে। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মানুষ একই রকম আবেগ অনুভব করে। সুদর্শন ক্রিয়া™ শরীর ও মনের মধ্যে সেই ছন্দের সামঞ্জস্য ফিরিয়ে আনে। যখন এই ছন্দ মিলেমিশে যায়, তখন আমরা একধরনের সামঞ্জস্য ও সুস্থতা অনুভব করি। আর যখন ছন্দের মিলন হয় না, তখন অস্বস্তি ও অশান্তি অনুভব করি।”
প্রতিটি আবেগের সঙ্গে শ্বাসেরও একটি নির্দিষ্ট ছন্দ যুক্ত থাকে। যেমন আবেগ আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের ধরণ বদলায়, তেমনই শ্বাসের ছন্দ পরিবর্তন করে আমরা আমাদের মন ও আচরণের ধরণও পরিবর্তন করতে পারি।
– গুরুদেব শ্রীশ্রী রবিশঙ্কর
তিনি আরও বলেন: “সুদর্শন ক্রিয়া™-র পর অনেকেই ভেতর থেকে নির্মল, পরিষ্কার ও পূর্ণতা অনুভব করেন। কারণ যে চেতনা বস্তুজগতের সাথে আটকে গিয়েছিল, সেটি মুক্ত হয়ে নিজের আসল স্থানে ফিরে আসে। এটাই হলো সেই নির্মলতার অনুভূতি। আমাদের ভেতরে একটা পরিষ্কার হওয়ার প্রক্রিয়া দরকার। ঘুমের মাধ্যমে আমরা ক্লান্তি দূর করি, কিন্তু শরীর ও মনে জমে থাকা গভীর চাপ থেকে মুক্ত হতে পারি না। সুদর্শন ক্রিয়া ভেতর থেকে সেই গভীর চাপ পরিষ্কার করে দেয়।” ১০০-রও বেশি স্বতন্ত্র গবেষণায় সুদর্শন ক্রিয়ার উপকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।প্রমাণিত হয়েছে যে সুদর্শন ক্রিয়া শরীর ও মনের ভেতরে জমে থাকা চাপ দূর করে আর গভীরভাবে ডিটক্সিফাই করে।
সুদর্শন ক্রিয়া™– র উপকারিতা
- উদ্বেগ, হতাশা, (পোস্ট-ট্রমাটিক-স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়
- আবেগপ্রবণতা ও আসক্তি কমায়
- আত্মসম্মান ও জীবনসন্তুষ্টি বৃদ্ধি করে
- মনঃসংযোগ ও একাগ্রতা বাড়ায়
- উন্নত ঘুম আনে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- রক্তচাপ কমায়
- শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যকারিতা উন্নত করে
সুদর্শন ক্রিয়া™কে শিখতে ও করতে পারেন?
যে কেউ জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে চান ও চাপমুক্ত জীবনযাপন করতে চান, তিনি সুদর্শন ক্রিয়া™ করতে পারেন। ছাত্র, চাকরিজীবী, উদ্যোক্তা, গৃহিণী থেকে শুরু করে প্রাক্তন জঙ্গি, বন্দি, যুদ্ধশরণার্থী ও সহিংসতার শিকাররাও এর সুফল ভোগ করেছেন।
সরাসরি উপকারিতা

গভীর ডিটক্স ও রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি
শ্বাসপ্রশ্বাস শরীরের ৯০% বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সুদর্শন ক্রিয়া™ শরীরে প্রাকৃতিক কিলার কোষ বৃদ্ধি করে, যা সংক্রমণ ও টিউমারের বিস্তার রোধ করে। তাই এই অনুশীলন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা হ্রাস
আজকের ব্যস্ত জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। না হলে সহজেই বার্নআউটে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিটের সুদর্শন ক্রিয়া™ অনুশীলন করলেই কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন)-এর মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এটি হতাশা ও উদ্বেগের উপসর্গ কমায়।

উন্নত ঘুম
ভাল ঘুম শরীরের টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুনর্গঠনের জন্য জরুরি। খারাপ ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন সুদর্শন ক্রিয়া™ অনুশীলন করলে সহজেই ঘুমের মান উন্নত হয়।

হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে
ভারত পৃথিবীর প্রায় ৬০% হৃদরোগের বোঝা বহন করে। আমাদের জীবনযাত্রা প্রতিদিন হৃদয়ের যত্ন নেওয়ার দাবি জানায়। সুদর্শন ক্রিয়া™ হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ কমায়। এছাড়াও এটি কোলেস্টেরল প্রোফাইল ও শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যকারিতা উন্নত করে।
প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিটের সুদর্শন ক্রিয়া অনুশীলন করলেই কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন)-এর মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
– গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর
সুদর্শন ক্রিয়ার উদ্ভব
গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর বলেন: “আমি বিশ্বভ্রমণ করেছি, যোগ ও ধ্যান শিখিয়েছি। তবুও ভাবতাম কিভাবে মানুষকে সত্যিকার সুখী করা যায়। দেখতাম মানুষ আধ্যাত্মিক চর্চা করলেও জীবনে বিভক্ত থাকে। বাইরে এসে একেবারেই ভিন্ন মানুষ হয়ে যায়। তাই ভাবছিলাম, কিভাবে ভেতরের নীরবতা আর বাইরের জীবনের প্রকাশের মধ্যে সেতুবন্ধন করা যায়। এই ভাবনার মধ্যেই নীরবতার সময় সুদর্শন ক্রিয়া™ প্রেরণা হিসেবে এল। প্রকৃতি জানে কখন কী দিতে হবে। এরপর থেকে যা জানতাম, মানুষকে শেখাতে শুরু করলাম, আর সবাই গভীর অভিজ্ঞতা পেলেন।”
সুদর্শন ক্রিয়া™ পরবর্তীতে আর্ট অব লিভিং–এর প্রতিটি কর্মসূচির মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে।