দিন দিন কর্পোরেট দুনিয়া কঠিন হয়ে উঠছে, অনেকেই এই চাপের কারণে অসুবিধা অনুভব করছে। আমাদের চিন্তায়, অনুভবে,ব্যবহারে – এক কথায় আমাদের পুরো জীবনের উপরেই এর প্রভাব পড়ছে। আর এই চাপের কারণে জীবনে বিপর্যয় ও দুর্দশা নেমে আসছে। তাই অতিরিক্ত মূল্য না দিয়ে কি করে একজন সাফল্য পেতে পারে চাপপূর্ণ জীবনে? আজকের দিনে সকলে এটাই জিজ্ঞাসা করছে। উত্তরটা কিন্তু খুব সহজ ও সরল হতে পারে।
এটা ঠিক সাইকেল চালানোর মত
সাইকেল চালানোর গুপ্ত রহস্য কি? সমতা বা ব্যালেন্স। মধ্যখানে স্থির থেকে ডাইনে বা বাঁয়ে পড়ে না যাওয়া। যখন একদিকে সাইকেল কাত্ হয়ে যায় তখন তুমি তাকে মধ্যখানে নিয়ে আসো। কিন্তু যখন তুমি সমতা হারিয়ে ফেলো তখন কষ্ট পাও।সে কথাটা শোনো। এটাকে অবজ্ঞা করো না। মেনে নাও এবং মধ্যিখানে এসো। যখন তুমি জীবনের যে কোনো বিষয়ে সমতা হারিয়ে ফেলো তখন তোমার উচিত অন্তরাত্মার কথা শোনা এবং কেন্দ্রে ফিরে আসা।
প্রকৃত সাফল্যের গূঢ় রহস্য হলো জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখা কোনো কিছুর প্রতি না জড়িয়ে যাওয়া বা বিরূপ না হওয়ায়।
গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর
পুনরুজ্জীবনের প্রতি মনোযোগ
প্রথমে কাজ এবং পুনরুজ্জীবনের মধ্যে সময়ের ভারসাম্য রাখো। তোমার আহারের প্রতি যত্নশীল হও, ব্যায়াম করো এবং ধ্যান ও বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখো। দুপুরে তোমার কার্য ক্ষেত্রে একসঙ্গে খাওয়া ও ধ্যান করার কথা বলা হয়। যখন মানুষ একসাথে বসে ধ্যান করে কয়েক মিনিট এবং খাবার ভাগ করে নেয় নিজেদের মধ্যে, তখন তারা পুনরুজ্জীবিত হয় এবং দিনের দ্বিতীয় ভাগেও সেই শক্তি পায় যা তাদের মধ্যে সকালে ছিল।

শিল্প তোমার জন্য সঠিক
দ্বিতীয়ত, যেকোনো প্রকার শিল্পের প্রতি উৎসাহী হও। কর্পোরেট দুনিয়াতে তুমি বাম মস্তিষ্কের কার্যকলাপে যেমন যুক্তিপূর্ণ চিন্তা, পরিকল্পনা করা, বিশ্লেষণ করা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকো। তাই তোমার বাম দিকের মস্তিষ্কের কর্ম ও ডান দিকের মস্তিষ্কের কর্মের মধ্যে সমতা রক্ষা করা দরকার। ছবি আঁকা, গান গাওয়া, কবিতা লেখা বা যে কোনো ধরনের সৃজনশীল ও মনোরঞ্জনকারী কার্যকলাপ সক্রিয় করে ডান দিকের মস্তিষ্ককে। যখন মস্তিষ্কের এই দুই ভাগের মধ্যে সমতা থাকে তখন তুমি তোমার মধ্যে অধিক স্বচ্ছতা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, উৎপাদন ক্ষমতা, এবং বিশ্রাম উপলব্ধি করো।
জীবন ও কাজের মধ্যে সমতা
তৃতীয়ত, কর্ম ও জীবনের মধ্যে সমতা আনো। তোমার অন্তরাত্মার কথা শোনো। যদি তুমি তোমার পরিবারকে অবজ্ঞা করো তাহলে সেটা তোমাকে পীড়া দেবে। যদি তুমি তোমার সামাজিক কর্তব্য বা ব্যবসাকে অবজ্ঞা করো, তাহলে তাও তোমাকে পীড়া দেবে। যদি তুমি তোমার আধ্যাত্মিক অভ্যাসকে অবজ্ঞা করো তাহলে সেটাও তোমাকে পীড়া দেবে। সুতরাং যেখানে যা কিছু তোমাকে পীড়া দিক না কেনো, ফিরে এসো কেন্দ্রে।
সেবার মাধ্যমে চাপ মুক্তি
চতুর্থত, কিছু সেবামূলক কাজ করো।তোমার চারপাশের লোকেদের সাহায্য করো। চাপ দূরীকরণের এটা প্রকৃষ্ট উপায়। সমাজের জন্য তোমার অবদান থাকা উচিত। যখন তুমি কিছু সেবামূলক কাজ করো তখন তা তৎক্ষণাৎ পুনরুজ্জীবিত করে তোমার অন্তরকে।
অপূর্ণের মাঝে পূর্ণতা
অবশেষে, জায়গা রাখো অপূর্ণতার জন্য। অল্প স্বল্প অন্যের অপূর্ণতার সঙ্গে নিজের অপূর্ণতাকেও গ্রহণ করো জীবনে। এটা তোমাকে অধিক ধৈর্যশীল করবে। এটা তোমার বাড়ির সেই জায়গার মতন যেখানে তুমি আবর্জনার বালতি রাখো। এরও প্রয়োজন আছে কারণ তুমি বাড়ির অন্যান্য অংশ পরিষ্কার রাখতে চাও।