পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে প্রতি ঘণ্টায় ভারতে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে চলেছে। গত পাঁচ দশকে ভারতবর্ষে আত্মহত্যার হার বেড়েই গেছে। এই সমস্যাটি বর্তমান প্রজন্মকে নিয়ে হচ্ছে। আগের প্রজন্মের সকলের বেশি মনের দৃঢ়তা ছিল- চট্ করে তারা মনমরা ভাব কাটিয়ে উঠতে পারতো। এখন জীবন অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে গেছে। তোমাদের ইচ্ছা অচিরেই পূরণ হচ্ছে, তাই তোমরা বেশি বিষণ্ণ হয়ে পড়ছো। তোমাদের বেশি প্রচেষ্টা করতে হয় না। তোমরা সহজেই সব পেয়ে যাও, তাই তোমাদের মন এদিকে ওদিকে ঘোরে।

তোমার মনের কিছু একটা করা প্রয়োজন। যখন তুমি শারীরিক ভাবে সক্রিয়, দৌড়াচ্ছ অথবা ব‍্যায়াম করছো, তখন তোমার মন কোন কাজ করে না। কিন্তু যদি তুমি শুধু বসে থেকে সোশ্যাল মিডিয়া দেখতে থাকো, তাহলে তোমার মন রেসের ঘোড়ার মতো দৌড়াতে থাকে। এবং সেটা বিষণ্ণতায় নিয়ে যেতে পারে।

বিষণ্ণতা কোথা থেকে আসে?

  • কম শক্তি: যখন তোমার শক্তি কমে যায়, বিষণ্ণতা ঘটে। শক্তি স্বাভাবিক থাকলে তুমি স্বাভাবিক বোধ করো। শক্তির পারা নেমে গেলে তুমি নিরুৎসাহিত হয়ে বিষণ্ণ বোধ করো। যদি তা আরো নিচে নেমে যায়, তাহলে তোমার ইচ্ছাশক্তিও হারিয়ে যায়।
  • আমার কি হবে? চুপ করে বসে থেকে শুধু চিন্তা করো আমার কি হবে? আমার কি হবে? আমার কি হবে? – এটা বিষণ্ণ হবার একটা পন্থা। তুমি চুপ করে বসে শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো- “আমার কি হবে? আমার কি হতে পারে? “ – তোমার কি হতে পারে? এমনও হতে পারে যে তুমি মাটির নিচে সমান্তরাল শুয়ে থাকবে!
  • প্রশংসার অভাব: একঘেয়েমি অভিশাপ হয়ে ওঠে যখন তা হতাশা ও বিষণ্ণতায় নিয়ে যায়। যদি তুমি জীবনে কোনো কিছুকে সমাদর বা প্রশংসা না কর, তবে তুমি ভরে উঠবে নেতিবাচকতায়। যে ব‍্যক্তির জীবনে উপাসনা করার বা সম্মান করার কিছুই নেই, সে অবশ্যই বিষণ্ণতার শিকার হবে।
  • জড়ত্বের উপলব্ধি: জীবনে জড়ত্বের উপলব্ধির একটি নিদর্শন হলো বিষণ্ণতা। যখন তোমার মনে হয় জীবনে সব কিছু মৃত, জড়, আর কিছু নেই, কোথাও যাবার নেই; তখনই তুমি বিষণ্ণ হয়ে যাও।

কি করে বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব?

  • বীরত্বকে আহ্বান করো: নিজের মধ্যে যে বীরত্ব ও শৌর্য আছে তাকে আহ্বান করো। অতীতে ফিরে দেখো কত সমস্যার মোকাবিলা করে বর্তমানের এই অবস্থায় এসেছো। জানো যে তুমি এই সমস্যাকেও জয় করতে পারবে।
  • দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করো: বড় বড় সমস্যার দিকে নজর দাও । চেয়ে দেখো- পৃথিবীতে অনেক বড় ও বৃহত্তর সমস্যা আছে । সেদিকে তাকালে দেখবে তোমার নিজের সমস্যা অনেক ছোট হয়ে গেছে। যে মুহূর্তে তোমার নিজের সমস্যা ছোট মনে হবে, তখনই তুমি তার সম্মুখীন হওয়ার শক্তি ও ভরসা পাবে।

    সুখের সন্ধানে! একবার একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি একটি সরলরেখা এঁকে তার ছাত্রদের বললেন রেখাটিকে ছোট করতে, কিন্তু রেখাটিকে স্পর্শ করা যাবে না বা মোছা যাবে না। কিভাবে করবে তুমি? সরলরেখাটিকে না ছুঁয়ে তাকে ছোট করতে হবে। একজন বুদ্ধিমান ছাত্র সেই সরলরেখাটির নীচে একটা আরও বড় সরলরেখা এঁকে দিল। ব‍্যস, স্বাভাবিকভাবেই প্রথম সরলরেখাটি ছোট হয়ে গেল। এখানে শিক্ষনীয় এটাই যে যদি তোমার নিজের সমস্যা বড় বলে মনে হয়, তবে চোখ তুলে তাকাও কারণ তুমি শুধু নিজের উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছ। চোখ তুলে তাকিয়ে যখন অন‍্যদের সমস্যা দেখবে তখন হঠাৎই অনুভব করবে যে তোমার সমস্যা ততটা নয় যতটা আগে ভেবেছিলে। যদি তুমি ভাবো তোমার বড় সমস্যা রয়েছে, সে সব মানুষের দিকে তাকাও যাদের সমস্যা তোমার থেকে অনেক বড়। হঠাৎই আস্থা অনুভব করবে এবং নিজের সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
  • সেবা করার অঙ্গীকার করো: এর পরে আরও এক ধাপ এগোও। এমন কিছুর উপরে তোমার মন ও শক্তি নিবদ্ধ করো যা তোমার উদ্দেশ্য অথবা তোমার জন্য উপকারী। যা সব থেকে অর্থপূর্ণ তা হল নিজে সুখের পেছনে না ছুটে, অন্যের জীবনে সুখ আনা। যাদের বেশি প্রয়োজন, তাদের সেবা করো। যখন তুমি অঙ্গীকার করবে যে তোমার যা আছে তুমি অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেবে, অন্যের সেবা করবে, তখন তোমার সমস্যা অনেক কমে যাবে । যদি সারাক্ষণ নিজের কথা চিন্তা করো, তোমার সমস্যা পাহাড়প্রমাণ হয়ে দেখা দেবে। কিন্তু যদি খোলা মনে তাকিয়ে দেখো পৃথিবীতে, দেখবে সমস্যা শুধু তোমার একার নয়।
  • মনকে শক্ত করো: নিজের মনের শক্তিতে বিশ্বাস রাখো। তুমি যেমন বীজ বপন করবে তেমনি তোমার ফলন হবে। নিজের চেতনায় ইতিবাচকতার বীজ বপন করো যাতে তোমার মন নেতিবাচকতার থেকে ইতিবাচকতাকে বেশি আকর্ষণ করে।
  • নিজের শক্তি বাড়াও: তুমি কাউকে ক্রমাগত ওষুধ দিলে তা কিছু সময়ের জন্য অবশ্যই কাজ করবে কিন্তু তারপর কাজ করা বন্ধ করে দেবে। ওষুধ সমাধান নয় । তবে আর কি করতে পারো তুমি? তোমাকে নিজের প্রাণশক্তি বা ‘প্রাণা’ বাড়াতে হবে যোগ ব্যায়াম, সুষম আহার , ধ্যান, শ্বাস ও সুদর্শন ক্রিয়া প্রভৃতির মাধ্যমে। এতে তোমার শক্তির স্তর উন্নত হবে। ধ‍্যান তোমাকে সুখী, সতর্ক করবে এবং অনুমান ক্ষমতা বাড়াবে। অতীতে যা ঘটে গেছে তার থেকে দূরে নিয়ে তোমাকে বর্তমান মুহূর্তে সজীব অনুভব করাবে। প্রাণার স্তর বাড়লে তুমি বেশি খুশি ও উৎসাহী হবে। যখন তা পূর্ণ হবে তুমি পরমানন্দ অনুভব করবে। সমাধি ও ধ‍্যান তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্বত:স্ফূর্ত হও! স্বত:স্ফূর্ততা আসবে যখন তুমি নিজের গভীরে গিয়ে কিছু ক্ষণের জন্যে বিশ্রাম নেবে। যখন সব কিছু স্বাভাবিক থাকে, সব কিছু ঘটে তোমার মতানুসারে , তখন মুখে হাসি থাকাটা কোনো বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু সমস্যাঘন পরিস্থিতিতে যদি তুমি নিজের বীরত্বকে আহ্বান করে বলতে পারো,  “যাই হোক না কেন, আমার মুখের হাসি অমলিন থাকবে “ তবে সমস্যা আর সমস্যা থাকবে না, তারা শুধু আসবে আর যাবে আর তুমি লক্ষ্য করবে যে তোমার ভেতর থেকে একটা প্রচন্ড শক্তি উঠে আসছে।
  • শ্বাসের শক্তি উদ্ঘাটিত করো: আমাদের শ্বাস আমাদের আবেগের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি আবেগের সঙ্গে শ্বাসের একটা বিশেষ ছন্দ আছে। তাই তোমরা যদি সোজাসুজি আবেগকে লাগাম পরাতে না পারো, তখন শ্বাসের সাহায্য নাও। যারা নাটকে অভিনয় করেছ , তারা নিশ্চয়ই জানো যে যেখানে রাগ দেখানোর প্রয়োজন সেখানে পরিচালক দ্রুত শ্বাস নিতে বলেন। তেমনি শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশে মৃদু ও ধীর গতিতে শ্বাস নিতে বলেন। আমরা যদি আমাদের শ্বাসের ছন্দ বুঝতে পারি তাহলে আমরা আমাদের মনকেও নিজের মতো করে চালনা করতে পারব। রাগ, হিংসা ও লোভের মতো যেকোনো নেতিবাচক অনুভূতিকে আমরা জয় করতে পারবো এবং অন্তর থেকে অনেক বেশি হাসতে পারবো। সুদর্শন ক্রিয়ার মতো শ্বাস পদ্ধতি কিন্তু সত্যি সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত সুদর্শন ক্রিয়া করে চাপ, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতার মাত্রা কমেছে।
  • সর্বশক্তিমানের ওপর বিশ্বাস রাখো: অনেক ক্ষেত্রেই রাগে বা হতাশায় আমরা ক্লান্ত হয়ে বলি, “ আমি হাল ছেড়ে দিলাম।” কিন্তু রাগ বা হতাশা দূরে সরিয়ে শান্ত মনে যদি প্রার্থনা করি, “ আমি এই সমস্যার সমাধান করতে পারছিনা। ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করুন । আপনার চরণে সব সমর্পণ করলাম।” – জেনো যে তুমি অবশ্যই সাহায্য পাবে। এই বিশ্বে এমন এক শক্তি আছে যা তোমাকে সাহায্য করবেই। এই আস্থা অবশ্যই রেখো যে তুমি সাহায্য পাবেই। বিশ্বের এক শক্তি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করবে।

সারাংশ

বিষণ্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠার এবং অন্তরে শান্তি খুঁজে পাওয়ার জন্যে প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং সক্রিয় কর্মসাধন। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে স্বীকার করতে হবে যে সব সমস্যাই সাময়িক। পাশাপাশি অন্যের সেবা করলে আমরা অনেক শক্তি পেতে পারি আর আনন্দ উপলব্ধি করতে পারি। আমাদের শ্বাসের শক্তিকে লাগাম পরিয়ে ধ‍্যান করলে আমরা আমাদের মধ্যে মানসিক দৃঢ়তা ও আনন্দ আনতে সক্ষম হবো। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রেখে স্বত:স্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে গেলে আমরা আনন্দে ভরা পরিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারবো।

“দ‍্য আর্ট অফ লিভিং হ‍্যাপিনেস প্রোগ্রাম “ এর মাধ্যমে বিষণ্ণতা কে দূর করে অন্তরে শান্তি অনুভব করার পথ আবিষ্কার করুন।

এই বিষয়বস্তুটি কোনো পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ, রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার বিকল্প নয়। সব সময়েই চিকিৎসকের বা অন্য দক্ষ স্বাস্থ্যবিশারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সব সমস্যার বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করা উচিত।

    Wait!

    Don't leave without a smile

    Talk to our experts and learn more about Sudarshan Kriya

    Reverse lifestyle diseases | Reduce stress & anxiety | Raise the ‘prana’ (subtle life force) level to be happy | Boost immunity

     
    *
    *
    *
    *
    *