অবসাদ

অবসাদ থেকে গভীর সন্তুষ্টি অবধি

জীবন একটা যুদ্ধ। ডাক্তাররা ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। আইনজীবীরা অবিচারের বিরুদ্ধে লড়ছেন। শিক্ষকরা লড়ছেন অজ্ঞতার বিরুদ্ধে। অবসাদ ঘটে যখন তোমরা লড়াই করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলো। অর্জুনের অবসাদ হয়েছিলেন এবং যুদ্ধ করতে চাননি। ধনুক তাঁর হাত থেকে পড়ে যায় এবং তাঁর আঙ্গুল কাঁপতে থাকে। শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে অনুরোধ করেন সজাগ হয়ে যুদ্ধ করতে। লড়াই করার সিদ্ধান্ত তোমার অবসাদ দূর করতে পারে, যেমন অর্জুনের ক্ষেত্রে হয়েছিল। যখন তোমরা সুদর্শন ক্রিয়া এবং ধ্যান করো, তখন অতীতের সব ক্ষত যা তোমাদের বিরক্ত করছিল, তোমাদের জীবন দুঃসহ করে তুলেছিল, তা নিমেষের মধ্যে দূরে চলে যায়।

অবসাদ থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়?

icon

দায়িত্ব নাও

বিষন্নতা বা মানসিক অবসাদ অর্থনৈতিক মন্দার থেকেও খারাপ। কান্ডারী হয়ে আশেপাশের সকলকে সাহায্য করে তরীকে কূলে নিয়ে যেতে একজনকে দায়িত্ব নিতে হয়। তাই অবসাদের কথা যদি ধরো তবে এটাকে তোমার কর্ম বলে ভেবোনা। তুমি অবশ্যই এ ব্যাপারে কিছু করতে পারো।

icon

জেনো যে জীবন অমূল্য

তোমার জীবন কত অমূল্য! একে হারিয়ে যেতে দিও না। যখন তুমি ধ্যান করো তখন অতীতের সব ক্ষত - দুঃখ ও বেদনা, যা এত কাল তোমাকে বিরক্ত করেছে, তোমার জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছে সেসব মুছে যায় নিমেষের মধ্যে। তোমার নিজেকেই পৃথিবীতে সব থেকে দামি মনে করা উচিত কারণ তুমি হলে এই পৃথিবীর কেন্দ্র।

icon

শুধু বসে থেকে চিন্তা করো না

তাই শুধু বসে থেকে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করোনা। "আমার কি হবে?” - কি হতে পারে তোমার? তুমি শুধু চিন্তা করতে থাকো এবং বিষন্ন হও। তুমি এই পৃথিবীতে এসেছ সমাজের জন্য কিছু কাজ করতে। এটা বোঝো এবং যেকোন সেবা কর্মের সঙ্গে যুক্ত হও। সুদর্শন ক্রিয়া আর ধ্যানের অভ্যাস কর। নিয়মিত কিছুদিনের জন্য সুদর্শন ক্রিয়া করো এবং দেখো কতটা পরিবর্তন ঘটে।

icon

জেগে ওঠো

কিসের জন্য তুমি বিষন্ন? সজাগ হও আর দেখো। যাইহোক ,আমরা সবাই একদিন মৃত্যুবরণ করবো, আমাদের দেহ থেকে যাবে এখানে। বাকি যে সময়টা আমি এই পৃথিবীতে আছি, সে সময়টা কি আমি খুশি থেকে আমার চারপাশে আনন্দ ছড়াতে পারি না?কিছু না চেয়ে, আমি কি নিজেকে একজন দাতার আসনে বসাতে পারি না? আমি তো অন্তত সবাইকে আশীর্বাদ দিতে পারি। যদি তুমি নিজের জীবনে ভালো কিছু করার সংকল্প নিয়ে থাকো, সেই স্পন্দন ছড়িয়ে দাও চারপাশে - তাহলে দেখবে তোমার অবসাদ জানলা দিয়ে পালিয়ে যাবে।

অবসাদ ও শক্তির মধ্যে গোপন সংযোগ

যখন শক্তি কমে যায় তখনই অবসাদ আসে। যখন শক্তির পারা নিচে নামতে থাকে, তখনই তোমরা নিরুৎসাহী হয়ে পড়ো। যখন তা আরো নিচে নেমে যায় তখন তোমাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই হারিয়ে যায়।

“প্রাণা“ বা প্রাণশক্তি সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে। আদতে আমরা সবাই “প্রাণা” বা প্রাণশক্তির সমুদ্রে ভাসছি। এ হলো আমাদের ভিতরের জীবনী শক্তি। পাথরের মধ্যে থাকে একমাত্রা প্রাণা। জলের আছে দুই মাত্রা। আগুনের আছে তিন মাত্রা এবং বাতাসের আছে চার মাত্রা প্রাণা। গাছপালার আছে পাঁচ মাত্রা এবং পশুপাখিদের ছয় মাত্রা প্রাণা। মানুষেরা সাত মাত্রা থেকে ১৬ মাত্রা অবধি প্রাণশক্তির অধিকারী হতে সক্ষম। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড হল এই প্রাণশক্তির প্রকাশ।

যখন প্রাণশক্তি কমে যায় তখনই তোমরা বিষন্ন বোধ কর। যখন তা আরো কমে যায় তখন তোমাদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা জাগে। যখন প্রাণা বেশি থাকে তখন তোমাদের উৎসাহ উদ্দীপনা জাগে। যখন প্রাণশক্তি খুব বেশি থাকে তোমরা শক্তিতে ভরপুর হয়ে পরমানন্দ অনুভব করো। তাই যখন কেউ বিষন্ন হয়, তখন শুধু পরামর্শ দিয়ে কাউন্সেলিং করে লাভ হয় না। প্রাণ শক্তির স্তরকে বাড়ানোর জন্য যা করণীয় তাই করা উচিত।

ব্যায়াম, সুষম আহার, ধ্যান, শ্বাস গ্রহণ ও সুদর্শন ক্রিয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে প্রাণাকে বাড়াও। যখন শক্তি বেশি থাকে তোমরা বেশি খুশি বোধ করো। তোমরা উৎসাহী হও এবং যখন তা সর্বোচ্চ ও সম্পূর্ণ হয় তোমরা পরমানন্দ উপলব্ধি করো।

সম্পর্কিত কার্যক্রম

ধ্যান হল অবসাদ ও বিষন্নতা দূরীকরণের চাবিকাঠি

বিষন্নতার একটি লক্ষণ হলো জীবন সম্বন্ধে স্থিতিশীল ধারণা। যখন মনে হয় জীবনে সবকিছুই মৃত, স্থির আর নতুন কিছু নেই, কোথাও যাবার নেই তখন তুমি বিষন্ন বোধ করো। এটা ঘটে যখন তোমার লড়াই করার ইচ্ছা হারিয়ে যায়। আধ্যাত্মিকতা হলো ধ্যান, সেবা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে নিজের আত্মাকে উন্নত করা। এটা অবসাদকে দূর করতে সাহায্য করে।

- গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শংকর

আত্মহত্যার প্রবণতার বিষয়ে কি প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত?

নিজের বিরুদ্ধে হিংস্রতা অপরের বিরুদ্ধে হিংস্রতার মতোই খারাপ। তাই বিশ্বসংসার একদিকে সামাজিক হিংস্রতা এবং অন্যদিকে আত্মহত্যার প্রবণতার মধ্যে আটকা পড়েছে। একমাত্র আধ্যাত্মিকতাই এদেরকে কেন্দ্রে এনে এই দুই চরমপন্থী মনোভাবের কবল থেকে মুক্তি দিতে পারে।

যদি তুমি কারো মধ্যে সামান্যতম আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য কর, তাহলে পেশাদারী চিকিৎসার সাথে তাকে সুন্দর সাহচর্য দাও, নাচে গানে উৎসাহিত করো এবং বোঝাও যে কিছু জাগতিক বস্তু বা অবস্থানের থেকে জীবন অনেক বড়।

কারো দোষারোপ বা গুণগানের অনেক ঊর্ধ্বে এই জীবন। কোন সম্পর্ক বা চাকরির থেকেও অনেক বড় জীবন। আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে ব্যর্থ হওয়া ,চাকরি না পাওয়া, বা যা পেতে চাইছি তা না পাওয়া - আমাদের মনে, চেতনায় যে এই ছোট ছোট আকাঙ্ক্ষা গুলো জেগে ওঠে, জীবন তার থেকে অনেক বড়।

তাই পেশাদারী চিকিৎসা এবং সাহায্য যা প্রয়োজন তা নাও, কিন্তু জীবনকে দেখো আরো বিশাল পরিপ্রেক্ষিত থেকে এবং নিজেকে কোন সেবা কর্মের সঙ্গে যুক্ত কর।