যোগনিদ্রা একটা অমূল্য পদ্ধতি যার সাহায্যে গভীর বিশ্রাম উপলব্ধি হয় এবং আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এটা নির্দেশিত ধ‍্যানের মতো, আমাদের কোনো প্রচেষ্টাই করতে হয় না। যোগনিদ্রার নিয়মিত অনুশীলন আমাদের গভীর বিশ্রাম প্রদান করে এবং মানসিক আঘাত ও চাপ থেকে মুক্ত করে। দিবানিদ্রার পরিবর্তে 20 মিনিটের যোগনিদ্রা আমাদের অনেক বেশি গভীর বিশ্রাম দেয় ।যোগনিদ্রায় জড়িয়ে থাকে বিশ্রামপূর্ণ সচেতনতা।

যোগনিদ্রা ও ঘুমের মধ্যে পার্থক্য

ঘুম হলো আমাদের চেতনার চারটি স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে একটি। চেতনার চারটি অবস্থা হলো সজাগতা, স্বপ্ন, ঘুম বা নিদ্রা এবং তূরীয় অবস্থা বা সমাধি। সাধারণত আমরা সজাগতা থেকে স্বপ্ন হয়ে ঘুমের অবস্থাতে যাই। ঘুমানোর সময় এই সাধারণ প্রক্রিয়া মেনে আমরা শুয়ে পড়ি ।কিন্তু ঘুমের মধ্যে আমাদের সচেতনতা থাকে না এবং আমাদের পাঁচ ইন্দ্রিয় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এর ফলে আমাদের দেহতন্ত্র উজ্জীবিত হয়। কিন্তু যোগনিদ্রায় যদিও ইন্দ্রিয়সমূহ বিশ্রামে থাকে, তবু শব্দ বা নির্দেশের উৎসের প্রতি সূক্ষ্ম মনোযোগ থাকলেই আমরা সচেতনতাকে ধরে রাখতে পারি। যোগনিদ্রায় একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের নির্দেশে আমরা আমাদের সচেতনতাকে দেহের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালন করাতে পারি ।যোগনিদ্রায় আমরা শ্বাসেরও সাহায্য নিয়ে থাকি।

তাই আমরা আমাদের সচেতনতাকে গোটা দেহে শ্বাসের সাহায্যে সঞ্চালন করিয়ে সাধারণ ঘুমের থেকে অনেক বেশি গভীর বিশ্রাম উপভোগ করি।

যোগের ক্ষেত্রে সচেতনতাটাই শক্তি। তাই যখন তোমরা হাঁটু সম্বন্ধে সচেতন হও, তখন শক্তি হাঁটুকে উজ্জীবিত করে, এবং যখন সচেতনতাকে কোমরে নিয়ে যাও, কোমরে শক্তির সঞ্চার হয়। তেমনি যোগনিদ্রায় দেহের বিভিন্ন অংশে সচেতনতাকে ঘুরিয়ে সজ্ঞানে বিশ্রাম নিলে দেহ ও মন দুটোই গভীর ভাবে উজ্জীবিত হয়।

যোগনিদ্রা ও ধ‍্যান

যোগনিদ্রা তোমাদের ধ‍্যানস্থ অবস্থায় নিয়ে যায়, এটা আর কিছুই নয়, শায়িত অবস্থায় এক প্রকারের ধ‍্যান।

গভীর বিশ্রাম এবং গতিশীল কার্যক্রম একে অপরের পরিপূরক। তুমি কিভাবে গতিময় ও কর্মক্ষম হবে, যদি না তুমি দেহ ও মনকে গভীর বিশ্রাম দিয়ে থাকো? যে কখনো ঘুমায়নি সে কখনোই সক্রিয় বোধ করতে পারে না।

-গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশংকর

যোগনিদ্রা অভ‍্যাসের তাৎপর্য

দেখা যাক আমাদের প্রাত‍্যহিক জীবনে কি ঘটে। মনের স্তরে ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তা দুটোই থাকে। আমাদের আবেগও ইতিবাচক ও নেতিবাচক হয়। তাহলে চিন্তা কি? আবেগ কি? চিন্তা হল মনের স্তরে কিছু শক্তির তরঙ্গ এবং আবেগ হল অনুভূতির স্তরে কিছু শক্তির তরঙ্গ। ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তা এবং আবেগ আমাদের প্রাণশক্তি বা ‘ প্রাণা ‘ কে সূক্ষ্ম দেহের মধ্যে সঞ্চালন করায়।যদি তা ইতিবাচক হয়, তাহলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজনা এবং উদ্দীপনা আনে। আর তা নেতিবাচক হলে স্নায়ুতন্ত্রে সংকোচন এবং সম্পীড়ন আনে। আমরা তাই সবসময় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একদিকে উত্তেজনা ও প্রসারণ এবং অন্যদিকে সংকোচনের মধ্যে দুলতে থাকি। প্রতিটি কার্যকলাপে, কথাবার্তায়, কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে বা বিভিন্ন চ‍্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে আমরা এই দোলাচলে বাঁধা পড়ে মন ও আবেগের স্তরে চাপ সৃষ্টি করি এবং আমাদের স্নায়ুতন্ত্র সেই চাপ শুষতে শুরু করে।

এবার দেখা যাক যোগনিদ্রা করলে কি হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা শুয়ে পড়ি এবং যারপরনাই স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। এরপরে আমাদের সচেতনতাকে দেহের এক অংশ থেকে অন্য অংশে আরাম করে শ্বাস নিতে নিতে নিয়ে যাই। যে মন অতীত ও ভবিষ্যতের বৃত্তে অনুতাপ, রাগ, দুশ্চিন্তা বা পরিকল্পনা করাতে ঘুরতে থাকে, সেই মন ধীরে ধীরে ওই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমান মুহূর্তে স্থিত হয়। যখন তোমার মন সম্পূর্ণ ভাবে বর্তমান মুহূর্তে থাকে তখন তুমি কিছু করনা, চিন্তা করনা, এমনকি কোনও পরিকল্পনাও করনা। তোমার মন অতীতে নেই তাই রাগ বা অনুশোচনা নেই। যে মুহূর্তে মন বর্তমান মুহূর্তে আসে, সে যা আঁকড়ে ধরে রেখেছিল –  সেই সব অতীতের ছাপ এবং ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা মুহূর্তেই ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে থাকে। স্নায়ুতন্ত্র তখন এমন গভীর বিশ্রামের অবস্থায় চলে যায় যে মন অতীতের অনুভূতিকে মুক্তি দিতে থাকে। আমরা জানি না কোন অনুভূতি মুক্তি পেল, কিন্তু তারা মুক্ত হচ্ছে। এর ফলে চাপের থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। দৈহিক চাপের সঙ্গে চিন্তাপ্রসূত মানসিক চাপ এবং অনুভূতিপ্রসূত আবেগজনিত চাপ সকলই দূরীভূত হয়। যেহেতু তোমরা শুয়ে থাকো এবং ধীরে আরাম করে গভীর শ্বাস নাও, দেহের পেশিসমূহের ক্লান্তিও দূর হয়। তাই যোগনিদ্রা হলো দৈহিক, মানসিক ও আবেগজনিত চাপের সম্পূর্ণ দূরীকরণ।

যোগনিদ্রা নিয়মিত অভ্যাস করলে গভীর মানসিক আঘাত দূর হতে পারে

যোগনিদ্রার প্রাত‍্যহিক অভ‍্যাস একটা বিশাল পরিবর্তন আনে। যখন তুমি নিয়মিত যোগনিদ্রা করতে শুরু করো তখন গোড়ার দিকে অল্প দৈনিক চাপ দূর হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত করলে যোগনিদ্রার অভ‍্যাসটাও গভীর হয় এবং গভীর মানসিক আঘাত বা বহু পুরনো দুঃখজনক স্মৃতি যা দেহ-মনকে অবশ করে রাখে, তাও দূরীভূত হয়।

যোগনিদ্রার গুরুত্ব, প্রাত‍্যহিক যোগাভ‍্যাসকারীদের জন্যও বটে

যখন আমরা যোগাভ‍্যাস করি, আমরা দৈহিক স্তরে প্রচেষ্টা করি। দৈনন্দিন জীবনে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে প্রায়শঃই আমাদের জীবনযাত্রা ক্লান্তিকর ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। আমরা সবসময় কাজ করতে থাকি। এখন যোগও কিছু করার অঙ্গ হয়ে গেছে। কিন্তু যোগনিদ্রা বা ধ্যান করার সময়েই একমাত্র আমরা এমন অবস্থায় থাকি যেখানে কিছুই করতে হয়না, শুধু বিশ্রামের জন্যই বিশ্রাম নেওয়া হয়। এখানে কোন প্রচেষ্টাই নেই,  কারণ ‘করার ‘ মধ্যে ক্লান্তি ও অবসাদ থাকে। তাই যখন তুমি যোগ করছ, সেখানে প্রচেষ্টা থাকে কিন্তু যোগনিদ্রায় তুমি ধীরে চলে যাও প্রচেষ্টাহীন অবস্থায়, গভীরতম বিশ্রামে, যা তোমার দেহ ও মনের জন‍্য পরম আকাঙ্ক্ষিত।

গুরুদেব বলেন, -“ তীর দূরে ছুঁড়তে হলে ধনুকের ছিলাকে তেমনই পেছনে টানতে হয়। তাই যখন অতি ব‍্যস্ত জীবনে সারাদিন ধরে একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়, তখন বিশ্রামের মানও তেমনি গভীর ও উৎকৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন। যেখানে প্রচুর কাজ করতে হবে সেখানে বিশ্রামের মান উচ্চ ও উন্নত হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে দক্ষতার সঙ্গে আপোস করতে না হয়।

যে কোনো যোগাসনের অনুক্রমে যোগনিদ্রা দিয়ে শেষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আসনগুলোর প্রভাবকে অঙ্গীভূত করতে দেহ ও মনের সময় লাগে।

– গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশংকর

যোগনিদ্রা করার সময় মনে রাখার কিছু বিষয়

  • বিশ্রাম করো। যোগনিদ্রা করার আগে যদি মনে কোনো আকাঙ্ক্ষা বা সঙ্কল্প থাকে, তাহলে তা 2-3 বার স্মরণ করে সম্পূর্ণ ভাবে ছেড়ে দাও।
  • তিনটে জিনিস যত্ন করে মনে রাখো- আমি কিছু চাইনা, আমি কিছু করছিনা, আমি কিছু না। এবং এর পরে সম্পূর্ণ ছেড়ে দাও।
  • প্রতিদিন অভ‍্যাস করো।দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মানুবর্তী হয়ে করো।
  • শ্রদ্ধার সঙ্গে অভ্যাস করো। শ্রদ্ধার সঙ্গে অভ‍্যাস করলে অভিজ্ঞতা আরও প্রগাঢ় ও উন্নত হয়।

    Wait!

    Don't leave without a smile

    Talk to our experts and learn more about Sudarshan Kriya

    Reverse lifestyle diseases | Reduce stress & anxiety | Raise the ‘prana’ (subtle life force) level to be happy | Boost immunity

     
    *
    *
    *
    *
    *