প্রথমত, তোমরা কি জানো মানসিক চাপ কি? মানসিক চাপ হলো সেই অবস্থা যেখানে অনেক কিছু করার আছে এবং সময় বা শক্তি খুব কম। যখন আমাদের প্রচুর কাজ থাকে অথচ সময় বা শক্তি যথেষ্ট থাকে না, তখন আমরা মানসিক চাপ বোধ করি।
এখন, কিভাবে আমরা আমাদের শক্তির স্তরকে বাড়াবো?
- সঠিক পরিমাণে খাদ্য – খুব বেশি নয় আবার খুব কম নয়।
- সঠিক পরিমাণে ঘুম – 6-8 ঘন্টা, বেশি নয়, কমও নয়।
- কিছু শ্বাসাভ্যাস শেখা – এতে তোমাদের শক্তি বাড়বে।
- কয়েক মিনিটের ধ্যান সব ধরনের চাপ দূর করতে পারে। যদি তোমরা সকালে ও সন্ধ্যায় 15-20 মিনিট ধ্যান করো, তাহলেই যথেষ্ট । এটা তোমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
সবকিছুরই একটা প্রথমবার থাকে, কিন্তু এটাই প্রথমবার নয় যে তুমি চাপ অনুভব করছো!
তোমার জীবনের অতীতের সেই মুহূর্তগুলোর কথা মনে কর যখন তুমি অনুভব করেছিলে এটাই সেটা! মনে হচ্ছে পৃথিবীর শেষ এসে গেছে! কিন্তু তুমি সেই ঝড়ঝাপ্টা কাটিয়ে এসেছো, এবং বেঁচে আছো – প্রাণবন্ত ও অদম্য । মনে রেখো, অতীতে তুমি অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছো এবং তাদের জয় করেছ। তাই অ্যত্মবিশ্বাস রাখো যে এই বাধার মোকাবিলা খুব ভালো ভাবেই করতে পারবে।
তোমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত কর! এই বিশ্বে ভিন্ন নিয়মে সব কিছু ঘটে।
তুমি হয়তো খেয়াল করেছ যে তুমি মানুষের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছ, কিন্তু তবুও কিছু মানুষ হঠাৎই তোমার শত্রু হয়ে গেছে। তোমার বন্ধুরা তোমার শত্রু হয়েছে। এবং এর উল্টোটাও ঘটে। যার জন্য তুমি কোনো বড় উপকার করোনি, যখন সত্যি তোমার প্রয়োজন হয় সে তোমাকে সাহায্য করে। তাই এই পৃথিবীতে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা হয় এক বিশেষ নিয়মে – যাকে বলে কর্ম। যখন তোমার সময় ভালো থাকে, তখন তোমার অতি বড় শত্রুও বন্ধুর মতো আচরণ করে; আর যখন তোমার সময় খারাপ হয়, তখন তোমার পরম বন্ধুও শত্রুতা করে। তাই বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিষয়টা উপলব্ধি কর। এবং ধৈর্য্য ধরো, এই সময়টাও কেটে যাবে।
অপেক্ষা করো- এটাও অতিবাহিত হবে।
কখনো আমাদের মনে হয় হাল ছেড়ে দিই, আমরা হতাশ হই। এর কারণ চাপ। সেই সময়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিওনা। নিলে আফসোস করতে হবে। আগে নিজের শান্ত, স্থিত অবস্থায় ফিরে এসো। নিজেকে স্থিত অবস্থায় ফেরাতে সময় দিলে ধীরে ধীরে চাপও কমবে।
একটু হাঁটাহাঁটি করো, বসো, সূর্যাস্ত দেখো
হয়ত শহরে আকাশছোঁয়া বড় বড় বাড়ির জন্য সূর্যাস্ত দেখা যায় না। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে বা শিশুদের সঙ্গে খেলা করলেও তা সহায়তা করবে। দুঃখের বিষয় আমরা শুধু সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে টিভি দেখি আর অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। এটা সমাজের স্বাস্থ্যের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। সুস্থ সমাজের জন্য প্রয়োজন আমাদের অভ্যাসের পরিবর্তন।
এবং সব শেষে বলবো,
চাপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই তা প্রতিহত করতে।
কথায় বলে, -“ যুদ্ধক্ষেত্রে তীরন্দাজি শেখা যায় না।” সেই অবস্থানে যাবার আগেই তোমাকে তীরন্দাজি শিখতে হবে। তাই যে মুহূর্তে তুমি চাপ অনুভব করছো তখন কিছু করা বেশ শক্ত, কিন্তু তার আগে থেকেই যদি তুমি এমন কিছু করো যাতে ওই অবস্থায় যেতে না হয়, তবে কখনোই চাপ বোধ করবে না।
তাহলে চাপ দূর করতে সাহায্য করবে তোমার আচরণের ধরনের পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, জীবনের বিভিন্ন বিষয়গুলো দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, তোমার যোগাযোগ ক্ষমতা, সমালোচনা গ্রহণ করা এবং সহ্য করার ক্ষমতা, সাধারণভাবে জীবনের প্রতি মনোভাবই সবচেয়ে বেশি পার্থক্য সৃষ্টি করে।
দ্য আর্ট অফ লিভিং এর মূল ভিত্তি, সুদর্শন ক্রিয়া পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে চাপ কমাতে ভালো বিশ্রাম পেতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করেছে। চারটে মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে, যার মধ্যে ইয়েল ও হারভার্ড রয়েছে, পরিচালিত এবং পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাগুলো প্রমাণ করেছে যে এই পদ্ধতি কর্টিজল নামক চাপের হরমোনের মাত্রা কমানো থেকে শুরু করে সামাজিক সন্তুষ্টির পরিসরও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।