“একজন সাধক সে – যে জানে প্রতিটি মানুষের অন্তরে দেবত্বের এক ঝলক আছে এবং তাই তারা কখনো খারাপ হতে পারে না। আমি তোমাদের বলছি , সৃষ্টিকর্তা কোনো খারাপ মানুষ সৃষ্টি করেননি। সকলের মধ্যে আলোক রয়েছে।”
তুমি কি মানুষের ভালোত্বে বিশ্বাস করো?
এই পৃথিবীতে বস্তুত দুটি প্রকারের মনোভাব বা দুটি প্রকারের মানুষ রয়েছে:
- তারা, যারা ভাবে যে ভেতর থেকে সকল মানুষ খারাপ।
- তারা, যারা ভাবে যে সকলে আদতে ভেতরে ভালো, যদিও তাদের আচরণ একটু খারাপ, – খারাপ ব্যবহারটা শুধু পরিধিতে।
প্রথম প্রকারের মানুষরা কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না আর দ্বিতীয় প্রকারের যারা, তারা কাউকে বেশি সন্দেহ করতে পারে না। তুমি কি পার্থক্যটা বুঝতে পারছো? তুমি যদি ভাবো অন্তরে সবাই ভালো তাহলে তোমার সন্দেহ বাহ্যিক হবে। তুমি কাউকে গভীরভাবে সন্দেহ করো না কারণ তুমি জানো যে সকলের ভেতরে ভালোত্ব আছে। তুমি সকলের ভালোত্বে বিশ্বাস করো।
দ্বিতীয় দলের মানুষদের কিন্তু বিশ্বাস নিয়ে এক বিশাল সমস্যা আছে কারণ তারা ভাবে অন্তরে সকলেই খারাপ। যদিও বাইরে তাদের ভালো দেখায়, অন্তরের গভীরে তারা ভালো নয়। এই মনোভাব – তোমার মনের এই ধারণা তোমাকে কাউকে বিশ্বাস করতে দেয় না।
প্রজ্ঞা হল উপলব্ধি করা যে নেতিবাচকতা আছে শুধু পরিধিতে
এটা খুবই আশ্চর্য ব্যাপার যে যখনই তুমি কারো মধ্যে কিছু ভুল দেখো, তখনই তুমি ভেবে নাও যে সেটাই সেই ব্যক্তির প্রকৃত স্বভাব।
আমি তোমাকে একটা ঘটনার কথা বলতে চাই।
গত বছরে আমি ভারতের উত্তরাঞ্চলের এক শহরে বিশাল সৎসঙ্গে গিয়েছিলাম। সেখানে একজন কুখ্যাত ব্যক্তি এসে মঞ্চে উঠে চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। উপস্থিত সাংবাদিকরা এবং অন্যান্য সকলে বলাবলি করছিল যে, – “এই লোকটা অপরাধী, কি করে এ গুরুজীর কাছে পৌঁছালো আর ওনার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলো? “
এই লোকটা এতোই কুখ্যাত যে সে বলতো, “ আমি একটা ফোন করে যে কোনো এরোপ্লেনকে থামাতে পারি।”
সে যেকোনো ট্যাক্সি থামিয়ে চালককে নামিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যেত । তার অপরাধের সংখ্যা অগণিত। তাই যখন সে মঞ্চে এল, সবাই অবাক হলো, – “ গুরুজী কি করে অনুমতি দিলেন?“
তোমরা জানো, এই একই ব্যক্তি যে কোন কোর্স করেনি, কিছু করেনি, তিন মাস পরে ব্যাঙ্গালোর আশ্রমে শিবরাত্রির সময় আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সে পকেট থেকে আমার ছবি বার করে বলেছিল, “গুরুদেব, যবে থেকে এই ছবি আমি পকেটে রেখেছি তবে থেকে আমি আমার কোনও কাজ করতে পারছিনা। কি ঘটেছে? আপনি কি করেছেন? আমার জীবন সব উলটপালট হয়ে গেছে, আমার গোটা জীবন বদলে গেছে। এখানে কত আনন্দ! আমি এখন এই আনন্দ আমার রাজ্যে নিয়ে যেতে চাই আর সমস্ত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই।“
এই সেই ব্যক্তি যাকে সকলে অসামাজিক গুন্ডা মনে করেছিল। সাংবাদিকরা পর্যন্ত একে ভয় পেত। সাংবাদিকরা সাধারণত কাউকে ভয় পায় না। কিন্তু তারা বলতো, – “এই ব্যক্তি সাংঘাতিক।“
তুমি যেমন দেখো পৃথিবীটা তেমনি
তোমরা কি জানো যে আমরা যে ভাবে সবাই কে অনুভব করি বা উপলব্ধি করি, পৃথিবীটা তেমনি হয়ে ওঠে। সংস্কৃত ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- যথা দৃষ্টি তথা সৃষ্টি। তুমি যেভাবে পৃথিবীকে দেখবে, পৃথিবী তোমার জন্য তেমনি হবে। তুমি যদি দেখো পৃথিবীটা ভয়ংকর মানুষে ভরা, তাহলে তোমার অভিজ্ঞতা সব ভয়ংকর ই হবে। তুমি যদি দেখো যে পৃথিবীতে শুধু ভালো মানুষ ই আছে, তবে জঘন্য অপরাধীর মধ্যেও তুমি ভালো মানুষ খুঁজে পাবে। তুমি ঠিক চিনতে পারবে।
তাই মানুষকে বিচার কোরোনা বা তাদের ভালো অথবা মন্দ বলে চিহ্নিত কোরোনা। একই দেবত্ব নিজেকে প্রকাশ করে নানা ভাবে, নানা মানুষের মধ্যে, বিভিন্ন মেজাজে এবং নানা রঙে। আলো কিন্তু একটাই। আমরা যদি এটা উপলব্ধি করি, তাহলে আমাদের মধ্যে এত গভীর শান্তি, এত বিশ্বাস ও আস্থা আসবে যে আমাদের কেউ টলাতে পারবে না।
সকলের মধ্যে আলো আছে
একজন সাধক সে – যে জানে অন্তরে প্রতিটি মানুষ দেবত্বের এক ঝলক, তাই তারা কখনো খারাপ হতে পারে না। সৃষ্টিকর্তা কোনো মন্দ মানুষ সৃষ্টি করেন নি। আমার থেকে জানো – জগতে কোনো মন্দ মানুষ নেই। সকলের মধ্যে আলো আছে। কোথাও তা লুকিয়ে, কোথাও তা ঘুমিয়ে আবার কোথাও বা কর্মের প্রকাশে।
তাই পথ এই দুটোই। তোমার মনের মধ্যে দেখো – তুমি কোন দিকে চলেছো। তুমি কি বিশ্বাসের পথে না সন্দেহের? তুমি যদি অন্যদের অপছন্দ করো বা নিজেকে অপছন্দ করো, তবে জেনো যে পরিবর্তনের সময় এসেছে; এবং বলো, – “ না, অন্তরে সকলেই ভালো।“











