আজকাল বহু মানুষ অবসাদের শিকার হচ্ছেন। ব্যস্ত ও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, অবসাদ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, জীবনের ভয়াবহ কোন পরিস্থিতির অভিজ্ঞতার সাথে মোকাবিলা করতে না পারা ইত্যাদি নানা কারণে এটি হতে পারে। অবসাদের উপসর্গ গুলির পার্থক্য নির্ভর করে এর তীব্রতা ও ব্যক্তিবিশেষের উপর। যিনি অবসাদে ভুগছেন তার ক্ষেত্রে এবং তার আশেপাশে থাকা মানুষজনের পক্ষেও এটি একটি কষ্টদায়ক পরিস্থিতি। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে পৃথিবীর ৩০০ মিলিয়নেরও অধিক বিভিন্ন বয়সের মানুষ অবসাদে ভুগছেন।
সুখবর: কিছু সাধারণ জীবনধারার পরিবর্তন যেমন যোগাসন, ধ্যান, সুষম খাদ্যাভ্যাস অবসাদকে জয় করতে পারে। কিভাবে এই তত্ত্বটি কাজ করবে? আয়ুর্বেদের মতানুসারে শরীর ও মনের যে সংযোগ সেখানে জীবনীশক্তি বা প্রাণ শক্তি হ্রাস পেলে হতাশা আসে। প্রাণশক্তির কারণেই উৎসাহ, আনন্দ ও শান্তি বিরাজিত। যোগ এবং ধ্যানের নিয়মিত অভ্যাসে প্রাণ শক্তির বৃদ্ধি ঘটে এবং অবসাদ দূর হয়। প্রকৃতপক্ষে, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যোগাভ্যাস মানুষের অবসাদ প্রশমিত করে।
সুস্থ হবার জন্য যখন কেউ এই পথে যাত্রা শুরু করবেন তখন তার আশাবাদী থাকা এবং সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে চলাটা খুব প্রয়োজন। গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর বলেন,”জীবন সুখ ও দুঃখের সমাহার। দুঃখ আসবেই কিন্তু কষ্ট পাওয়াটা ঐচ্ছিক। দুঃখের পরিস্থিতিতে জীবনের বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ তোমাকে শক্তি যোগাবে এগিয়ে যেতে। তুমি মনে রেখো পৃথিবীতে তুমি অপরিহার্য। অসীম সম্ভাবনাময় এই জীবন একটি উপহার, এটি কেবল নিজের জন্যই নয়, বহুজনের আনন্দের ধারা এবং সুখের কারণ হতে পারে।”
অবসাদ দূর করার কিছু যোগাসন
শিশু আসন

- গভীর আরামের অনুভূতি
- দুশ্চিন্তা ও হতাশাকে দূর করে স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখে।
হলাসন

- স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে, দুশ্চিন্তা ও ক্লান্তি নাশ করে।
- থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে উজ্জীবিত করে, সুমেজাজ এবং কর্মশক্তিকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শবাসনা

- দুশ্চিন্তা যেটি হতাশার প্রধান কারণ সেটি থেকে মুক্তি দিয়ে গভীর ধ্যান পর্যায়ের বিশ্রাম প্রদান করে।
- ভাতা দোষকে কম করতে সাহায্য করে – বায়ু তত্ত্বের অসমতা, যেটি আপনার অবসাদ ও দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
- নতুন প্রাণশক্তি প্রদান করে আপনাকে সতেজ করে তোলে।
অধোমুখ সবানাসনা

- শরীরে স্ফূর্তি এবং প্রাণশক্তি প্রদান করে।
- মস্তিষ্ক রক্ত সঞ্চালনের মাত্রাকে বাড়িয়ে আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়।
- মাথার যন্ত্রণা, অনিদ্রা এবং ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক হয়।
সেতু বন্ধাসনা

- মস্তিষ্ককে শান্ত করে, উদ্বেগ ও হতাশা দূর করে।
- ফুসফুসের প্রসারণ ঘটায় এবং থাইরয়েডের সমস্যা হ্রাস করে, যেটি কিনা মানসিক স্থিতিশীলতার অভাব ও হতাশার কারণ।
শ্বাস প্রক্রিয়া
শ্বাসের প্রক্রিয়া এবং প্রাণায়াম অবসাদ দূর করার একটি অতি কার্যকারী প্রক্রিয়া।
ভ্রামরি প্রাণায়াম
- উত্তেজিত মনকে প্রশমিত করে।
- মনের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে।
নাড়ি শোধন প্রাণায়াম

- অতীত এবং ভবিষ্যতের অযাচিত চিন্তাকে দূর করে মনকে বর্তমানে স্থিত করতে সাহায্য করে।
- নাড়িগুলির পরিশোধন করে – প্রাণশক্তির প্রবাহকে সুগম করে।
- সঞ্চিত উদ্বেগ গুলি নিবৃত্ত করতে সাহায্য করে।
এক ডজনেরও অধিক প্রকাশিত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যারা সুদর্শন ক্রিয়ার পদ্ধতি শিক্ষা গ্রহণ করে নিয়মিত অভ্যাস করছেন তারা উল্লেখযোগ্য ভাবে উদ্বেগ থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন।
হতাশা বা উদ্বেগের কারণ যতখানিই তীব্র হোক না কেন 67 – 73% সফলতা এই গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
অতিরিক্ত কিছু প্রাপ্তি
- সমাজের কিছু সেবায় আপনি যুক্ত হ’ন: চিন্তা করুন, ‘আমি সমাজের জন্য কি করতে পারি’,
- একটি বৃহৎ কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করলে, ‘আমার কি হবে’ এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
- আপনার খাদ্যাভ্যাসের প্রতিফলন আপনার উপর পরিলক্ষিত হয়: আপনি কি খাচ্ছেন সেটি লক্ষ্য করা আবশ্যক, যে খাদ্য গুলিতে প্রাণ শক্তি ভরপুর এবং স্বাস্থ্য সম্মত, শরীর ও মনের জন্য সেইগুলি প্রাসঙ্গিক।
- কিছু মন্ত্র অভ্যাস করা: মন্ত্র অভ্যাস শরীরের শক্তিকে বৃদ্ধি করে এবং মন শান্ত রাখে।
যোগাভ্যাস শরীর এবং মনের জন্য খুবই উপকারী, যদিও এটি ওষুধের বিকল্প নয়। প্রশিক্ষিত কোন শ্রী শ্রী যোগার শিক্ষকের নিকট যোগাভ্যাসের শিক্ষা গ্রহণ করাটা অত্যন্ত জরুরি। যদি কোন রকম শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে কোন যোগাসন শিক্ষা করার পূর্বে সেই সম্পর্কিত ডাক্তার এবং শ্রী শ্রী যোগা শিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।