ভূমিকা

ঘুমের আগে যোগব্যায়াম এবং গভীর ঘুমের জন্য আরামদায়ক ভঙ্গি সম্পর্কে আমাদের বিস্তৃত নির্দেশিকায় আপনাদের সুস্বাগতম। এই প্রবন্ধে আমরা যোগব্যায়ামের অসাধারণ জগৎ সম্পর্কে অন্বেষণ করব এবং কিভাবে এটি আপনাদের ঘুমের মান উন্নত করতে অবদান রাখে তা জানাব। আপনি যোগব্যায়ামে উৎসাহী হোন বা সবে শুরু করে থাকুন, আপনার রাতের সময়সূচীতে শয়নকালের যোগব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করলে আপনার সামগ্রিক সুস্থতার জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারেন।

শয়নকালের যোগব্যায়ামের উপকারিতা

ঘুমানোর আগে যোগব্যায়াম দৈহিক ও মানসিক, উভয় ক্ষেত্রেই বিস্তৃত সুবিধা প্রদান করে। এটা দেহকে শিথিল করে আরাম দিতে সাহায্য করে, চাপ ও টেনশন দূর করে, এবং মনকে শান্ত ও স্থির করে  বিশ্রামপূর্ণ ঘুমের জন্য তৈরি করে। কিছু প্রধান উপকারিতা দেওয়া হলো:

  • উন্নত নিদ্রার মান: শয়নকালে যোগব্যায়াম অভ্যাস করলে তা আপনার আভ্যন্তরীণ দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ঘুমের মান উন্নত করে যার ফলে  সকালে জেগে উঠে আপনি সতেজ ও পুনরুজ্জীবিত বোধ করেন।
  • চাপমুক্তি: যোগব্যায়ামের ভঙ্গি এবং গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের অভ্যাস মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে যা আপনাকে ঘুমানোর আগে সারাদিনের চিন্তাভাবনা ও দুশ্চিন্তা থেকে          বার হতে সাহায্য করে।
  • নমনীয়তা বৃদ্ধি: ঘুমের আগে যোগভঙ্গিমা নিয়মিত অভ্যাস করলে দেহের গাঁটের সঞ্চালন বাড়ে, নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়, এবং ঘুমের মধ্যে পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া ও অন্যান্য অস্বস্তি দূর হয়।
  • পেশীর শিথিলিকরণ: কিছু যোগব্যায়ামের ভঙ্গি নির্দিষ্ট পেশীসমূহের উপরে কাজ করে চাপ দূর করে গভীর শিথিলতা এনে দেয় যার ফলে পেশীর ব‍্যথার উপশম হয় এবং আরামে ঘুমানো সম্ভবপর হয়।
  • মনোযোগ বৃদ্ধি: শয়নকালীন যোগব্যায়াম মনকে সচেতনতার মাধ্যমে আভ‍্যন্তরীণ শান্তি অনুভব করিয়ে ঘুমানোর আগে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে।

গভীর ঘুমের জন্য শ্রেষ্ঠ শয়নকালীন যোগব্যায়ামের ভঙ্গিমা

এখন আমরা এমন কিছু শয়নকালীন যোগব্যায়ামের ভঙ্গিমার কথা বলবো যা আপনার ঘুমকে আরও বিশ্রামপূর্ণ করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। গভীর ঘুমের পরে আপনি পুনরুজ্জীবিত বোধ করবেন ।আপনার শরীরের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা অবশ্যই মনে রাখবেন এবং প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়কের পরামর্শ মেনে ভঙ্গিমার পরিবর্তন করবেন।

1. বালাসন

বালাসন একটা মৃদু ও আরামদায়ক ভঙ্গি যা কোমর, নিতম্বএবং উরুতে প্রসারণ ঘটিয়ে প্রশান্তি ও গভীর শিথিলতার অনুভূতি নিয়ে আসে। এটি অভ‍্যাস করতে হলে:

  • মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে, দুই হাঁটুর মাঝে নিতম্বের বেড়ের ব‍্যবধান থাকবে।
  • ⁠গোড়ালির উপর বসে, দুহাত সামনে প্রসারিত করে দেহের উপরিভাগ ধীরে নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
  • কপাল মাটিতে বা বালিশের উপর রেখে বিশ্রাম নিতে হবে। ধীরে গোটা শরীরকে ছেড়ে দিতে হবে।
  • মৃদু গভীর শ্বাস নিতে নিতে এই অবস্থায় থাকতে হবে 1-2 মিনিট।

2. বিপরীত করণি

এটা একটা বিপরীতমুখী পুনরুদ্ধারমূলক ভঙ্গিমা যা দেহের রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে, দুপায়ের ক্লান্তি ঘোচায় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে। এভাবে এটা করা যায়:

  • একটি দেয়াল খুঁজে তার পাশ বরাবর বসতে হবে নিতম্বকে দেয়ালে ঠেকিয়ে।
  • ⁠ধীরে ধীরে মাটিতে শুয়ে দেহকে ঘুরিয়ে পাদুটো তুলে দিতে হবে দেয়ালে।
  • দুটি হাত দেহের দুপাশে থাকবে, হাতের তালু আকাশের দিকে খোলা।
  • চোখ বন্ধ রেখে, দেহকে শিথিল করে শ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
  • ⁠এই অবস্থায় 5-10 মিনিট থাকতে হবে যাতে উপকারিতাটা পুরোপুরি পাওয়া যায়।

3. উথ্থানাসন

এই প্রশান্তিদায়ক ভঙ্গি ঘাড়, পিঠ এবং উরুর পেছনের মাংসপেশির মধ্যে চাপকে মুক্ত করে। নির্দেশ অনুযায়ী ধাপে ধাপে করা সম্ভব:

  • নিতম্বের বেড় অনুযায়ী দুপায়ের ব‍্যবধান রেখে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। দুহাত দেহের দুপাশে লম্বমান থাকবে।
  • শ্বাস ছেড়ে ধীরে ধীরে কোমর থেকে সামনের দিকে ঝুঁকতে হবে। প্রয়োজনে হাঁটুকে সামান্য ভাঁজ করা যেতে পারে।
  • ঘাড় ও মাথা শিথিল করতে হবে যাতে মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তি আমাদের এই ভঙ্গিমার গভীরে নিয়ে যেতে পারে।
  • সম্ভব হলে হাত মাটিতে রাখতে হবে অথবা দুহাত দিয়ে বিপরীত কনুই ধরে রাখতে হবে।
  • গভীর ভাবে শ্বাস নিয়ে এই ভঙ্গিতে 1-2 মিনিট থাকতে হবে।
Yoga Hastapadasana

4. সুপ্ত মৎস‍্যেন্দ্রাসন

এটা একটা মৃদু মোচড় যা মেরুদণ্ড থেকে চাপ দূর করে এবং পিঠের নিচের অংশকে প্রসারিত করে। এভাবে অভ্যাস করতে হবে:

  • মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে দুহাত ছড়িয়ে দিতে হবে দুপাশে (টি পোজ)
  • দুই পা ভাঁজ করে নিয়ে আসতে হবে বুকের কাছে।
  • ⁠ধীরে ডান হাত দিয়ে হাঁটুদুটোকে ধরে ডানদিকে এনে মাটিতে শোয়াতে হবে।
  • মাথাকে বামদিকে ঘুরিয়ে সোজা বামহাতের দিকে তাকাতে হবে।
  • ⁠গভীর শ্বাস নিতে নিতে 1-2 মিনিট এই অবস্থায় থাকতে হবে।
  • বিপরীত দিকে এই মোচড়ের পুনরাবৃত্তি করতে হবে।

5. শবাসন

এটি যোগাসনের ক্ষেত্রে শেষ শিথিলকরণ ভঙ্গি যা যোগব্যায়ামের উপকারিতাগুলোকে একীভূত করে দেহকে নিশ্চিন্ত গভীর ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে। এভাবে এটা করা সম্ভব:

  • চিৎ হয়ে শুয়ে পাদুটোকে লম্বা করে ছড়িয়ে দিতে হবে আরাম করে।
  • ⁠দুহাত দেহের দুপাশে থাকবে, হাতের তালু আকাশের দিকে খোলা।
  • চোখ বন্ধ করে দেহের প্রতিটি অংশে মনোযোগ নিয়ে যেতে হবে, পায়ের আঙ্গুল থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে উপরের দিকে মাথা অবধি।
  • যেকোনো চিন্তা, আশঙ্কা বা চাপ আস্তে আস্তে ছাড়তে হবে এবং বর্তমান মুহূর্তে সমর্পণ করতে হবে।
  • শবাসনে 10-15 মিনিট থাকতে হবে এবং কোনো প্রচেষ্টা ছাড়াই গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে।

উপসংহার

আপনাদের রাতের তালিকায় শয়নকালীন যোগব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করলে অবশ্যই নিশ্চিন্ত আরামে ঘুমাতে পারবেন। এই প্রবন্ধে আলোচিত শিথিলকরণ ভঙ্গিমাগুলো নিয়মিত অভ্যাস করলে নিদ্রার আগে শান্তিপূর্ণ ও প্রশান্তিদায়ক বাতাবরণ সৃষ্টি হবে যার ফলে দেহ ও মন পরম স্বাচ্ছন্দ্যে গভীর ঘুমের জন্য তৈরি হতে পারবে। তাই যোগম‍্যাট বিছিয়ে শয়নকালীন যোগব্যায়ামের প্রশান্তিদায়ক শক্তিকে আলিঙ্গন করে গভীর ঘুমে তলিয়ে যান – আমরা নিশ্চিত যে এমন ঘুমের অভিজ্ঞতা আপনাদের আগে কখনো হয়নি!

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

হ্যাঁ, যে সকল ব্যক্তি ইনসমনিয়ায় ভুগছেন, তাদের জন্য শয়নকালীন যোগব্যায়াম উপকারী হতে পারে। এই অভ্যাস দেহকে শিথিল করে মনকে বিশ্রাম দেয় যার ফলে ঘুমানো সহজ হয় এবং সারারাত ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব হয়।
হ্যাঁ, যে সকল ব্যক্তি ইনসমনিয়ায় ভুগছেন, তাদের জন্য শয়নকালীন যোগব্যায়াম উপকারী হতে পারে। এই অভ্যাস দেহকে শিথিল করে মনকে বিশ্রাম দেয় যার ফলে ঘুমানো সহজ হয় এবং সারারাত ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব হয়।
শয়নকালীন যোগব্যায়াম সাধারণত ঘুমানোর ১-২ ঘণ্টা আগে সুপারিশ করা হয়। এতে দেহ ও মন পূর্ণ সুযোগ পায় সম্পূর্ণ ভাবে শিথিল হয়ে বিশ্রাম নিতে।
অবশ‍্যই ! যারা নতুন শুরু করেছে তাদের জন্য শয়নকালীন যোগব্যায়াম উপযুক্ত। মৃদু ভঙ্গিমা দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সময়কাল ও তীব্রতা বাড়িয়ে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী অভ্যাস করতে হবে।
সাজসরঞ্জাম যেমন বালিশ, পাশবালিশ, কম্বল ইত্যাদির ব্যবহার আপনাকে আরও স্বাচ্ছন্দ্য দেবে এবং শয়নকালীন যোগব্যায়াম করতে সাহায্য করবে। ভঙ্গিমার পরিবর্তন করতে এবং আরও সহজে করার জন্য প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না।
যদিও কিছু ভঙ্গিমা বিছানায় করা যায়, কিন্তু সাধারণত শয়নকালীন যোগব্যায়ামের অভ্যাস যোগম‍্যাট অথবা নরম পৃষ্ঠতলে করতে বলা হয়। এটা বিশ্রামের জন্য একটা নিবেদিত স্থান সৃষ্টি করে এবং ঘুমের পরিবেশ কে অনুশীলনের স্থানের থেকে আলাদা করে।
শয়নকালীন যোগব্যায়ামের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা হলো মূল চাবিকাঠি ।নিয়মিত অভ্যাস করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এর উপকারিতা – উন্নত ঘুমের মান, চাপের পরিমাণ হ্রাস, বর্ধিত শিথিলতা প্রভৃতি উপলব্ধি করা সম্ভব।

    Wait!

    Don't leave without a smile

    Talk to our experts and learn more about Sudarshan Kriya

    Reverse lifestyle diseases | Reduce stress & anxiety | Raise the ‘prana’ (subtle life force) level to be happy | Boost immunity

     
    *
    *
    *
    *
    *