কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত?

আয়ুর্বেদের মতে, সুস্থ জীবনের তিনটি মূল স্তম্ভ হলো: আহার (খাদ্য), বিহার (সুষম জীবনযাপন), এবং নিদ্রা (ঘুম)। নিদ্রার উপর আয়ুর্বেদে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই ভালো ঘুম নিশ্চিত করার জন্য আয়ুর্বেদে অনেকগুলো পরামর্শ রয়েছে। প্রায়ই কিছু প্রশ্ন উঠে আসে —

ঘুমানোর সময় মাথার দিক কোন দিকে হওয়া উচিত? বিজ্ঞান অনুসারে কোন দিকটি ঘুমের জন্য শ্রেষ্ঠ? বাস্তুশাস্ত্র ও আয়ুর্বেদ অনুযায়ী কোন দিকটি উত্তম? প্রতিদিন কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত? সাউন্ড স্লিপ বা গভীর নিদ্রার জন্য কোন দিক সঠিক? শরীরের কোন পাশ ঘুরিয়ে ঘুমানো উচিত?

বিজ্ঞান কী বলে ঘুমের দিক নিয়ে?

ঘুমের দিক নির্বাচনের পেছনে একটি বৈজ্ঞানিক যুক্তি হলো পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে বিরূপ প্রভাব এড়ানো।

পৃথিবী একটি বিশাল চুম্বক, যদিও দুর্বল, তবে মানুষের উপর এর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর মেরুতে ধনাত্মক চৌম্বক শক্তি, দক্ষিণ মেরুতে ঋণাত্মক। মানবদেহের মাথা ধনাত্মক মেরু, পা ঋণাত্মক মেরু। ধনাত্মক মেরু একে অপরকে বিকর্ষণ করে। তাই যদি মাথা উত্তর দিকে হয়, তাহলে: মস্তিষ্কে চৌম্বক বিকর্ষণের কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

বাস্তুশাস্ত্র কী বলে ঘুমের দিক নিয়ে?

বাস্তুশাস্ত্র, যা আয়ুর্বেদের সহোদর বিদ্যা, দিক ও শক্তির সামঞ্জস্য নিয়ে কাজ করে। এটি প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান, যা স্থাপত্যবিদ্যার ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভালো থাকাকে নিশ্চিত করে। বাস্তুর লক্ষ্য হলো: পঞ্চভূত (আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল, পৃথিবী) এবং দিকের শক্তিগুলো ব্যবহার করে  এক সহজাত পরিস্থিতির  সৃষ্টি করা যার ভেতরে থাকলে  স্বাস্থ্য, সম্পদ, সুখ  ও সমৃদ্ধি ঘটে।

বিশিষ্ট বাস্তু বিশেষজ্ঞ মাইকেল মাস্ট্রো বলছেন: “আমরা কখনই মাথা উত্তর দিকে রেখে ঘুমাই না, কারণ উত্তর মেরু থেকে ধনাত্মক চৌম্বক শক্তি আসে। আমাদের শরীর একটি চুম্বকের মতো, যার মাথার অংশে ধনাত্মক মেরু থাকে। তাই যখন আমরা উত্তরদিকে মাথা রেখে শুই, তখন সেটা যেন দুটো ধনাত্মক চৌম্বক মেরুকে কাছাকাছি আনার মতো হয়। ফলস্বরূপ, এই মেরুগুলোর মতোই তারা একে অপরকে বিকর্ষণ করে এবং রক্তপ্রবাহ, রক্তসঞ্চালন ও হজমে ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে আরামদায়ক ঘুম হয় না। যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো অত্যন্ত উপকারী। (এই সুপারিশগুলি দক্ষিণ গোলার্ধেও পরিবর্তিত হয় না।)”

আমাদের শাস্ত্রে ঘুমের দিক নিয়ে কী বলা হয়েছে

প্রচ্যাং দিশী স্থিতা দেবস্তত্ পূজার্থং চ তচ্চিরঃ

(সূত্র: সূশ্রুত সংহিতা ১৯.৬)

সূশ্রুত সংহিতায় পূর্ব দিকে মাথা রেখে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ দিকে পা রেখে ঘুমালে প্রাণহানি ঘটতে পারে। জৈবিক শক্তির প্রবাহ উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘটে। প্রাণশক্তি শরীরে প্রবেশ করে পা দিয়ে, আর আত্মার প্রবেশ ঘটে গর্ভস্থ ভ্রূণের  মাথা দিয়ে।

যথ স্বকীয়ান্যজিনান্য সর্বে সংস্তীর্য বীরাঃ শিশুপুর্ধরণ্যাম অগস্তশস্তাং (দক্ষিণাং) অভিতো দিশং তু

শীরাংসি তেষাং কুরুসত্তমানাম (মহাভারত)

এই শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে এবং উত্তর দিকে পা রেখে ঘুমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমানো

উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমানো একেবারেই পরামর্শযোগ্য নয়। এতে শরীর থেকে শক্তি বেরিয়ে যায় এবং শরীর-মন-আত্মার সমন্বয় বিঘ্নিত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও একে অস্বাস্থ্যকর আমাদের শরীরের লোহিতাংশ এবং উত্তরের দিকে ঘুমানো আমাদের শরীরে থাকা লোহিত উপাদান (iron) মস্তিষ্কে জমা হয়, যার ফলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা, মানসিক চাপ বৃদ্ধি, শারীরিক ও মানসিক সমস্যা এবং অনিদ্রার সৃষ্টি হয়।

ডঃ বসন্ত লাড বলেন: “শুধু মৃত ব্যক্তিরাই উত্তরমুখী হয়ে ঘুমান।” হিন্দু রীতিতে মৃতদেহকে উত্তর দিকে মাথা করে শায়িত রাখা হয়, কারণ বিশ্বাস করা হয় উত্তর দিক হলো আত্মার দেহত্যাগের পথ।

পূর্ব দিকে ঘুমানো

সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয়, এবং এই দিককে ধরা হয় ইতিবাচক তরঙ্গের দিক, কর্মশক্তি, পুনরুজ্জীবন ও প্রাণশক্তির দিক। যখন আমরা মাথা পূর্ব দিকে করে ঘুমাই, সূর্যের শক্তি মাথা দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং পায়ের দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। এর ফলে মাথা ঠান্ডা থাকে ও পা গরম থাকে।

এটি বিশেষভাবে ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপকারী, কারণ এটি:

  • স্মরণশক্তি বাড়ায়
  • মনোযোগ বৃদ্ধি করে
  • সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো

এছাড়াও এটি ধ্যান ও আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য সহায়ক বলে ধরা হয়।

পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর ঘুমালে:

  • সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়
  • গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে
  • ত্রিদোষ (বাত, পিত্ত, কফ) ভারসাম্যপূর্ণ হয়

গবেষণায় দেখা গেছে, এই দিকে মাথা করে ঘুমালে:

  • REM (রাপিড আই মুভমেন্ট) আর স্লিপ সাইকেল কম হয়
  • চোখের চলাচল হ্রাস পায়। এতে কম স্বপ্ন হয় এবং ঘুম বেশি গভীর হয়।

পশ্চিম  দিকে ঘুমানো

পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে  ঘুমানো সাধারণভাবে সুপারিশ করা হয় না। কেউ কেউ মনে করেন এটি রজোগুণ বাড়ায় — অর্থাৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে, আবার কেউ কেউ এটিকে নিরপেক্ষ ঘুমানোর ভঙ্গি বলেও মনে করেন। তবে বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, পশ্চিম দিকে মাথা রেখে ঘুমালে ঘুমে অস্থিরতা ও ব্যাঘাত দেখা দিতে পারে, দুঃস্বপ্ন হতে পারে এবং হিংস্রতার প্রবণতা বাড়তে পারে।

দক্ষিণ দিকে ঘুমানো

যদি চুম্বকতত্ত্ব অনুযায়ী ভাবা হয়, তবে দক্ষিণের ঋণাত্মক শক্তি ও মাথার ধনাত্মক শক্তির পারস্পরিক আকর্ষণ ঘুমের ভেতরে একটি ঐক্যতানের সৃষ্টি করে। পুরাণ অনুযায়ী, দক্ষিণ দিক হলো যমদেবের দিক, এবং এই দিক ঘুমকে করে গভীর ও ভারী —ঠিক যেন মৃত্যুর মতো নতুন প্রাণশক্তিদায়ক।

বাস্তুশাস্ত্রের মতে, দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো সবচেয়ে উপকারী ঘুমের ধরণ — এটি রক্তচাপ কমায়, ইতিবাচক প্রাণশক্তির সঞ্চার করে, সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং সবকিছুর মধ্যে সামঞ্জস্য  আনে।

যাঁরা বাতপ্রকৃতির (Vāta) মানুষ — যাদের সাধারণত উদ্বেগ, শুষ্কতা ও ঠান্ডা হাত-পা থাকে, তাঁদের জন্য দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মাথা রেখে ঘুমানো সুপারিশ করা হয়।

যাঁদের পিত্ত দোষ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাঁরা সীমিত সময়ের জন্য উত্তর-পশ্চিম দিকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারেন।

আর যাঁদের কফ দোষ  (Kapha vikṛti), তাঁদের জন্য পশ্চিম দিকে মাথা রেখে সীমিত সময়ের জন্য ঘুমানো ভারসাম্য রক্ষা করতে  সহায়ক হতে পারে।

2009 সালে ভারতের হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর ফিজিওলজি বিভাগে একটি গবেষণা হয়, যেখানে দেখা হয় ঘুমের সময় মাথার দিক পরিবর্তনে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ এবং সিরাম কর্টিসলের ওপর কোনও প্রভাব পড়ে কিনা। এই গবেষণায় দেখা যায়, যাঁদের দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমাতে বলা হয়েছিল, তাঁদের সিস্টোলিক রক্তচাপ (SBP) ছিল সবচেয়ে কম।

রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন ও কর্টিসল সংক্রান্ত গবেষণা উপরোক্ত গবেষণায় দেখা যায়, দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো ব্যক্তিদের সিস্টোলিক রক্তচাপ (SBP), ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ (DBP), হৃদস্পন্দন (HR) এবং সিরাম কর্টিসল (SC) ছিল তুলনামূলকভাবে কম।

এই ফলাফলগুলি পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, যদিও গবেষণায় বলা হয়েছিল যে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।

আধুনিক বিজ্ঞান এখন সেই কথাগুলিই আবার বলছে, যেগুলি বাস্তুশাস্ত্র ও আয়ুর্বেদ বহু শতাব্দী আগে থেকেই বলে আসছে।

উপসংহার

  • দক্ষিণ-উত্তর: মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা উত্তর দিকে রেখে ঘুমানো উচিত।
  • পূর্ব-পশ্চিম: মাথা পূর্ব দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে ঘুমানো ভালো।
  • মাথা পশ্চিম দিকে রেখে ঘুমানো এড়িয়ে চলা উচিত।
  • মাথা উত্তর দিকে রেখে কখনোই ঘুমানো উচিত নয়।

ডান পাশ, না বাঁ পাশ — কোন পাশে ঘুমানো উচিত?

আয়ুর্বেদ মতে, বাম পাশে ঘুমানো সুপারিশ করা হয়, কারণ এতে নিঃশ্বাস ঠিকভাবে চলে, হৃদপিণ্ডের উপর চাপ কমে, রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

এখানে একটি প্রাচীন যোগ শাস্ত্রের উক্তি আছে, যা ঘুমের অবস্থান সম্পর্কে বলে:

“ভোগী পেটের উপর ঘুমায়, রোগী পিঠের উপর ঘুমায়, আর যোগী কাত হয়ে ঘুমায়।”

কাত হয়ে ঘুমালে শরীরে সূর্যনাড়ী (ডান নাসাপথ) এবং চন্দ্রনাড়ী (বাম নাসাপথ) সক্রিয় হয়, এবং প্রাণশক্তির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।এটি দেহ ও মনকে সুরক্ষিত রাখে, এবং আধ্যাত্মিক চেতনার সঙ্গে কোষগুলিকে সংযুক্ত করে রাখে।

সুতরাং, ঠিকভাবে দিক মেনে ঘুমানো শুধু আপনার ঘুম নয়, আপনার জীবনের শক্তিকেও রক্ষা করে।

লেখক পরিচিতি

অনুরাধা গুপ্তা একজন ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ ও আয়ুর্বেদিক ওয়েলনেস কাউন্সেলর। তিনি একজন কর্পোরেট পেশাজীবী, এবং The Art of Living সহ আরও অনেক সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।

তাঁকে আপনি Facebook বা LinkedIn-এ খুঁজে পেতে পারেন।

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ) – ঘুমানোর সেরা দিক

পূর্ব দিকটি বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সেরা ঘুমানোর দিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সার্বিক মঙ্গল বৃদ্ধি করে।
পূর্ব দিকই ঘুমানোর জন্য সর্বোত্তম।
পশ্চিম দিকে মাথা রেখে ঘুমানো এড়িয়ে চলা উচিত বলে সুপারিশ করা হয়।
উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমানো ভালো নয়। উত্তর মেরুর চৌম্বক আকর্ষণ ধীরে ধীরে সব স্থলভাগকে টেনে নিচ্ছে উত্তর দিকে। আমাদের রক্তে ভাসমান লৌহ উপাদান রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে রক্তপ্রবাহ হৃদয়ের নিচের দিকে বেশি থাকে। কিন্তু যখন মাথা (যা চৌম্বকে ধনাত্মক দিক) উত্তর দিকে থাকে, তখন চুম্বকের প্রতিক্রিয়া রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটিয়ে ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
সর্বদা উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমানো এড়ানো উচিত।
হ্যাঁ, আপনি মাথা দক্ষিণ দিকে ও পা উত্তর দিকে রেখে ঘুমাতে পারেন।
হ্যাঁ, এটি ঘুমানোর জন্য সর্বোত্তম দিক — মাথা পূর্ব দিকে ও পা পশ্চিম দিকে রেখে ঘুমানো ভালো।
পূর্ব দিকই ঘুমানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
রাতে ঘুমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো — মাথা পূর্ব দিকে ও পা পশ্চিম দিকে রেখে ঘুমানো।
স্ত্রী বিছানার বাম পাশে এবং স্বামী ডান পাশে ঘুমানো উচিত।
কিছু গবেষণা মতে, নগ্ন অবস্থায় ঘুমালে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়, ফলে ঘুম ভালো হয় এবং মানসিক অস্থিরতাও কমে।
পুরো শরীরের পেশিগুলো ধীরে ধীরে শিথিল করুন — কাঁধ, মুখ, ঠোঁট, কপাল, গাল, বুক, হাত, পা, উরু ও পিণ্ড একে একে রিল্যাক্স করুন — তাহলেই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বেন।
শুধু যদি আপনি অক্সিজেন সাপোর্টে থাকেন, তাহলে পেটের ওপর ভর দিয়ে ঘুমানো সুপারিশ করা হয়।

    Wait!

    Don't leave without a smile

    Talk to our experts and learn more about Sudarshan Kriya

    Reverse lifestyle diseases | Reduce stress & anxiety | Raise the ‘prana’ (subtle life force) level to be happy | Boost immunity

     
    *
    *
    *
    *
    *