ধ্যান

ধ্যান দেয় আমাদের গভীর বিশ্রাম

ধ্যান কি?

একসঙ্গে গভীর ভাবে বিশ্রাম নেওয়া, সজাগ থাকা এবং সচেতন থাকার পদ্ধতি হলো ধ্যান। মন কে শান্ত রাখার এবং অন্তরের আনন্দের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখার একটি কৌশল হলো ধ্যান। ধ্যান হলো কিছু না করার এক সূক্ষ্ম কৌশল এবং সব প্রচেষ্টা ছেড়ে দিয়ে বিশ্রাম করা নিজের সত্য প্রকৃতিতে - যা কিনা ভালবাসা, আনন্দ এবং শান্তি। ধ্যানের অনুশীলন তোমাকে দেবে গভীর বিশ্রাম। স্ট্রেস লেবেল কমানোর জন্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এটা খুবই প্রয়োজনীয়।

ধ্যান হলো একটি যাত্রা - শব্দের জগৎ থেকে নীরবতায়, গতিময়তা থেকে নিস্তব্ধ নিশ্চলতায়। ধ্যান হল আত্মার পুষ্টি।

- গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর

ধ্যানের উপকারিতা

ধ্যান করার সুফল নানাবিধ - মন শান্ত হয়, মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়, ভালো মনোসংযোগ হয়, মানসিক স্বচ্ছতা আসে, আবেগ ভারসাম্য হয়, উন্নত যোগাযোগ তৈরি হয়, নতুন কৌশল নতুন প্রতিভার উন্মেষ ঘটে, আরোগ্য লাভ করা যায়, বিশ্রাম পাওয়া যায়, তারুণ্য লাভ করা যায়, সর্বোপরি ধ্যানের ক্ষমতা থাকে সৌভাগ্যকে আকর্ষন করার।

icon

জৈব শক্তি

ধ্যান আমাদের চারপাশে ইতিবাচক এবং মনোরম শক্তি সৃষ্টি করে।

icon

ভালো স্বাস্থ্য

ধ্যান সাহায্য করে উচ্চরক্তচাপে, ডায়াবেটিসে, হার্টের সমস্যাতে, ত্বকের সমস্যাতে, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যাতে এবং আরো অনেক সমস্যাতে।

icon

উন্নীত মেজাজ (মানসিক অবস্থা)

ধ্যান সাহায্য করে আনন্দদায়ক মেজাজকে ধরে রাখতে। মানসিক অসুস্থতা এবং শারীরিক অসুস্থতাকে প্রতিরোধ করতে এটা বিশাল ভাবে সাহায্য করে।

আরম্ভকারী / প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ধ্যান

শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার মতন ধ্যান করার অভ্যাসটাও খুব সহজ। এর জন্য যেমন তোমাকে পাহাড়ে যাওয়ার দরকার হয় না তেমনি নিজেকে বন্ধ করে রাখারও দরকার হয় না। এটা গতিশীল একটা অভ্যাস যেটা কিনা খুব সহজেই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে তোমার নিত্য দিনের জীবনে।

অনেক ধরনের ধ্যানের মধ্যে থেকে তুমি পছন্দ করতে পারো যে কোনো ধরনের ধ্যান। সমস্ত রকম ধ্যানই তোমাকে সাহায্য করবে অনায়াসে বর্তমান মুহূর্তে স্থিত হতে। সত্যি বলতে, প্রথম বার ধ্যানে বসেই অনেক মানুষের উপলব্ধি এত সুন্দর হয়েছে যে তারা সেটা প্রকাশ করার জন্য কোনো শব্দ খুঁজে পাননি।

যখন তুমি শিখবে এবং প্রতিদিন অভ্যাস করবে ধ্যানকে সেটা দিনে এক বার বা দু বার হোক তখন তুমি অনুভব করবে ভিতরে ও বাইরে এক রূপান্তর। সেই রূপান্তর এতটাই যে শুধু তুমি নও, তোমার চারপাশের মানুষেরাও স্বীকৃতি দেবে তোমার বহন করা সেই সুন্দর শক্তিকে। সুতরাং নিজের জীবনে চাপমুক্ত এবং আনন্দে থাকার জন্য প্রত্যেকের উচিত প্রতিদিন কিছু ক্ষণ ধ্যান করা।

আমি ধ্যান করতে চাই কিন্তু...

আমার মন ঘুরে বেড়ায় সর্বত্র।কেমন করে ধ্যান করবো?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: একটা লাঠি নাও আর সেটা দিয়ে শুরু কর তোমার মন কে তাড়া করতে দেখো কোথায় যায় এটা তাড়া কর, তাড়া করতে থাকো তুমি দেখবে তোমার মন এত ক্লান্ত হয়ে গেছে যে সে তোমার পায়ে এসে পড়েছে। মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছেন সবকিছুর উপর ধ্যান করতে উপাদানের উপর ধ্যান করতে ঋষি যারা লালসা থেকে মুক্ত তদের উপর ধ্যান করতে যখন তুমি ঋষিদের উপর ধ্যান করবে যারা কিনা লালসার ঊর্ধ্বে তখন তুমি ধ্যানস্থ হবে যখন তুমি সৎসঙ্গে বসবে তখনও তুমি ধ্যানস্থ হয়ে যাবে কিন্তু তুমি যদি একশো ভাগ না দিয়ে সৎসঙ্গে বসো তখন তুমি সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকবে বা এদিক ওদিক তাকাবে উৎসাহ টা তোমাকে নিজেকে নিয়ে আসতে হবে তোমাকেই রস টা নিয়ে আসতে হবে এটা সেখানে আছে। তোমাকে সেটা নিয়ে আসতে হবে যে ব্যক্তি সেই রস ঢালতে পারবে আমি বলছি তার আর কিছু করতে হবে না সমস্তটাই পুড়বে তোমার জন্য এবং তার জন্য তোমাকে কিছু জ্বালাতে হবে না যখন তুমি গঙ্গায় ডুব দেবে তখন তোমার কল এবং শাওয়ারের কি দরকার উদ্যম হীন হয়ে যাও শুধু জানো যে আমি কিছু নই এবং আমি কিছু চাই না কিন্তু এটা নিয়ে বার বার ভেবো না এটাও একটা মায়া এই জন্য আদি শঙ্করাচার্য বলেছেন নিজেকে শূন্য ভাবা টাও বোকামি

কেনো চিন্তা আসে এবং কোথা থেকে তার উৎপত্তি হয়?কেনো চিন্তা আমাদের শাসন করে?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: কোথা থেকে চিন্তা আসে,মন থেকে নাকি দেহ থেকে? তোমার চোখটা বন্ধ করে নিয়ে এটা নিয়ে একটু ভাবো।এটাও হলো ধ্যান।এর পর তুমি পৌঁছাবে একটি পয়েন্টে বা তোমার মধ্যে একটি স্পেসে যেখান থেকে চিন্তা গুলো আসে এবং সেটা অপূর্ব

ধ্যানের মধ্যে নিজের অভিজ্ঞতা কে একজন কেমন করে উন্নত করবে?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: যদি ধ্যানের মধ্যে তোমার কোনো ভালো অভিজ্ঞতা না থেকে থাকে তাহলে তুমি সেবা কর বেশি করে। এর সুফল তুমি পাবে এবং তোমার ধ্যান গভীর হবে যখন তুমি তোমার সেবা দিয়ে করো জন্য নিয়ে আসবে কিছু স্বস্তি বা মুক্তি তখন ভালো ভাইব্রেশন ও আশীর্বাদ তোমার কাছে আসবে। সেবা নিয়ে আসবে সুফল সুফল সাহায্য করবে গভীর ধ্যানে যেতে ধ্যান নিয়ে আসবে তোমার হাসি এবং তুমি উপলব্ধি করতে পারবে ধ্যানের লাভ

আমি সবসময় ঘুমিয়ে পরি ধ্যান করার সময়।এটা কি সকলের সঙ্গে হয়? তাদের কি অভিজ্ঞতা হয়? কেমন করে এর সমাধান করা যায়?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: অন্যের উপলব্ধি নিয়ে চিন্তা করো না।নিজের উপলব্ধি নিয়ে থাকো। উপলব্ধি পরিবর্তিত হতে থাকে সময় সময়ে।সুতরাং চিন্তা করো না।ধ্যানের পদ্ধতি সাহায্য করে সর্বোত্তম শারীরিক বিশ্রামে

ধ্যান এবং ঘুমের মধ্যে পার্থক্য কি?

গুরুদেব রবি শঙ্কর: একটা হলো উলম্ব আরেকটা অনুভূমিক এখনকার জন্য শুধু চিন্তা করতে পারো সেটা কিন্তু কাল যখন তুমি বসবে ধ্যানে তখন এটা চিন্তা করো না।এটা চিন্তা করলে তুমি না পারবে ধ্যান করতে না পারবে ঘুমোতে। এখন সেই সময়

যখন আমি ধ্যানে বসি তখন কেনো পুরানো স্মৃতি বিরক্ত করে আমাকে?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: এটা কোনো ব্যাপার নয় মনোবল হারিও না তাদের আসতে দাও বলো, এসো ,আমার সঙ্গে বসো পাঁচ বছরের বা দশ বছরের বা কুড়ি বছরের পুরনো স্মৃতি, এসো,আমার সঙ্গে বসো যত তুমি দূরে যেতে চাইবে তাদের থেকে তারা তত তোমাকে বিরক্ত করবে

আমার সময় নেই যোগা এবং মেডিটেশনের জন্য।আমি কি করবো?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: যোগ এবং ধ্যান সময় বের দেবে তোমাকে । এগুলোর জন্য কোনো সময় নেই মানে তোমাকে যেতে হবে হসপিটাল অথবা চিকিৎসকের কাছে। কিছু শারীরিক অনুশীলন,যোগ,শ্বাসের অনুশীলন এবং তারপর ধ্যান ভালো

প্রতিদিন কতক্ষণ সময় ধরে একজনের ধ্যান করা উচিৎ?কখনও কি অধিক ধ্যান হয়ে যেতে পারে?

আমাদের দেহ কাজ করে একটা সিস্টেমের মত যেখানে একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টে আমরা বেরিয়ে আসি ধ্যান থেকে যেমন করে আমরা একটা পর্যাপ্ত ঘুমের পর জেগে উঠি। একদিনে তুমি পনেরো ঘণ্টা ধরে ঘুমিয়ে থাকতে পারো না। তুমি ছয় ঘন্টা ঘুমাও এবং শেষে যখন তোমার পর্যাপ্ত ঘুম হয়ে যায় তখন তুমি জেগে যাও একই রকম ভাবে আমাদের মধ্যে আছে এক বায়োলজিক্যাল ঘড়ি যা আমাদের কে বের করে নিয়ে আসে। সুতরাং তুমি জোড় করতে পারো না নিজেকে ধ্যানে যাবার জন্য তাই আমি সুপারিশ করি(পরামর্শ দি) কুড়ি মিনিট ,পঁচিশ মিনিট একটা দিনে যথেষ্ট। তুমি করতে পারো দু তিন বার কিন্তু স্বল্প ব্যবধানে দু বার নয় তুমি করছ কুড়ি মিনিট,দু বার তিন বার --- এটা তোমার ভালো করবে

ধ্যান কি খারাপ কর্ম কে অপসারণ করতে পারে?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: হ্যাঁ

ধ্যানের মধ্যে অপেক্ষার তাৎপর্য কি?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: কি হয় তোমার মনে, যখন তোমাকে অপেক্ষা করতে হয়? এই মুহূর্তে তোমার মনে কি চলছে? এই অপেক্ষা টাই নিয়ে যাবে তোমাকে ধ্যানে যখন তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে তখন হয় তুমি বিরক্ত বোধ করবে বা ধ্যানে চলে যাবে ধ্যান ভরাট করে সময় করে

আনন্দ উপভোগ(অংশ গ্রহণ)করার সর্বোত্তম উপায় কি?

গুরুদেব শ্রী শ্রী রবি শঙ্কর: একটা হলো ধ্যানের দ্বারা আরেকটা হলো তোমার চারপাশের মানুষ কে সেবার দ্বারা।কোনো সেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা নিজের মধ্যে ভগবান কে দেখা হলো ধ্যান তোমার চারপাশের মানুষের মধ্যে ভগবান কে দেখা হলো ভালবাসা এবং সেবা।তারা হাতে হাত রেখে চলতে থাকে